দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম

মতিঝিল নয়, কমলাপুর যাচ্ছে মেট্রোরেল

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুপারিশে মেট্রোরেল মতিঝিলের পরিবর্তে কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে করে যাত্রীদের সুবিধার ফলে মেট্রোরেলের উপযোগিতা আরো অনেকাংশে বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তাদের মতে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিপুলসংখ্যক যাত্রী কমলাপুরে যাতায়াত করেন। সেখান থেকে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় যেতে যাত্রীদের বাস, সিএনজি বা অটোরিকশার প্রয়োজন হয়। তবে এগুলো অনেক সময়ই প্রয়োজনের তুলনায় কম থাকে।

আর মেট্রোরেল কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণের ফলে ঢাকায় আসা ও ঢাকা ছেড়ে যাওয়া রেলের যাত্রীরা মেট্রোরেল ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। আবার মেট্রোরেলের উপযোগিতাও বাড়বে।

এ সম্প্রসারণের ফলে মতিঝিল থেকে কমলাপুর অংশটির দৈর্ঘ্য হবে ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার। এর ফলে এই প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়ে যাবে।

মেট্রোরেল প্রকল্প ২০১২ সালের ডিসেম্বরে অনুমোদন করা হলেও নকশা প্রণয়ন শেষে নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের জুনে। রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে দেশের প্রথম মেট্রোরেল (এমআরটি লাইন-৬)।

গত বছর অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী মেট্রোরেলটি মতিঝিলের পরিবর্তে কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠকে বসে সড়ক পরিবহন ও রেল মন্ত্রণালয়। তাতে প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত দেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব এবং এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক।

সূত্র মতে, দুই ভাগে চলছে মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ। এর মধ্যে আগস্ট পর্যন্ত উত্তরা-আগারগাঁও অংশের অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ৭৪ শতাংশ। আর আগারগাঁও-মতিঝিল অংশে প্রায় ৪৮ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর মেট্রোরেলের লাইনটি কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। এ জন্য সম্ভাব্যতা যাচাইও করা হয়েছে।

বর্তমানে মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য প্রায় ২০ কিলোমিটার। আর মতিঝিল-কমলাপুরের অংশটি বৃদ্ধি পাওয়ায় মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে ২১ কিলোমিটারের কিছু বেশি। এছাড়া উড়ালপথে (এলিভেটেড) নির্মাণাধীন এ মেট্রোরেলে ১৬টি স্টেশন ছিল। তবে কমলাপুর যুক্ত হওয়ার এ সংখ্যা দাঁড়াবে ১৭তে। যদিও বর্ধিত অংশ যেন মূল মেট্রোরেল র্নির্মাণ পরিকল্পনায় বিঘ্ন না ঘটায় সেজন্য কাজ করছে ডিএমটিসিএল।

প্রকল্প সূত্র জানায়, মেট্রোরেল কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সম্প্রতি এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।এতে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক জানান, প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশের ভিত্তিতে কমলাপুর প্রান্তে মেট্রোরেলের স্টেশন নির্মাণে সোশ্যাল সার্ভের জন্য জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থাকে (জাইকা) অনুরোধ করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, সরকার অনুমোদিত সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (আরএসটিপি) ২০১৫-২০৩৫-তে এমআরটি লাইন-৬ কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণের সুপারিশ রয়েছে। আবার ২০১৮ সালে এমআরটি লাইন-১ এর সম্ভাব্যতা যাচাইয়েও এমআরটি লাইন-৬ কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণের সুপারিশ করা হয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে ২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর মেট্রোরেল কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণের জন্য সোশ্যাল সার্ভে শুরু করা হয়েছে। বর্তমানে এটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। স্টেশনের অবস্থান চূড়ান্ত হওয়ার এক মাসের মধ্যে সোশ্যাল সার্ভে শেষ হবে।

সভায় আরো জানানো হয়, কমলাপুর এলাকায় মেট্রোরেলের স্টেশন নির্মাণের জন্য ডিএমটিসিএল ও রেলওয়ের কারিগরি দল গত ১৮ আগস্ট এক সভা করে। এতে রেলওয়ের পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে।

এগুলো হলো- কমলাপুর স্টেশন এলাকায় এমআরটি-৬-এর স্টেশন অপশন-১ (পাশাপাশি) অনুযায়ী স্টেশন এলাকায় ও সংলগ্ন সার্কুলার সড়ক সমন্বয়ে নির্মাণ করা যায়। তবে এমআরটি লাইন-৬ স্টেশনের শেষ প্রান্ত কমলাপুর স্টেশনের নারায়ণগঞ্জ প্ল্যাটফর্মের প্রবেশ সড়কের সীমানার মসজিদ সংলগ্ন প্রান্তে সীমাবদ্ধ রাখার শর্ত আরোপ করা হয়।

পাশাপাশি এমআরটি লাইন-১, লাইন-২ ও লাইন-৪-এর স্টেশনগুলো কমলাপুর মাল্টিমোডাল হাবের ল্যান্ডস্কেপ প্ল্যানের গ্রিনজোনের মধ্যে পাতালে (মাটির নিচে) নির্মাণ করা যায়।

ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, অপশন-১ অনুযায়ী কমলাপুরে এমআরটি লাইন-৬-এর স্টেশনের বর্তমান অবস্থান কার্ভ সেকশনের শেষ প্রান্ত থেকে শুরু হয়েছে। এতে স্টেশনের আগে ‘সিজার ক্রসওভার’ নির্মাণ করা সম্ভব নয়। সুষ্ঠুভাবে ট্রেন পরিচালনার জন্য স্টেশনের পরে ‘সিজার ক্রসওভার’ নির্মাণ করা অপরিহার্য।

সরকার ২০২১ সালের ডিসেম্বরে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেল চালুর পরিকল্পনা করছে। তবে করোনাভাইরাসজনিত পরিস্থিতিতে এ প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

প্রসঙ্গত, মেট্রোরেল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি সাত লাখ টাকা। এর মধ্যে জাইকা ঋণ দিচ্ছে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। আর সরকারি তহবিল থেকে বাকি পাঁচ হাজার ৩৯০ কেটি ৪৮ লাখ টাকা সরবরাহ করা হবে। তবে করোনাসহ অন্যান্য কারণে ব্যয় বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

/এন এইচ

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close