আশুলিয়াপ্রধান শিরোনামবিশেষ প্রতিবেদনস্থানীয় সংবাদ

মানবতার সেবক; আপনি ঘরে, তারা বাইরে

রিফাত মেহেদী, বিশেষ প্রতিনিধি: প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের থাবায় থমকে গেছে বিশ্ব। শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম লকডাউন। রয়েছে ঘরে থাকার অনুরোধ। প্রয়োজনে কঠোর হচ্ছে প্রশাসন।  বিশ্বের মত আমাদের দেশের নানা প্রান্তেও একই চিত্র। তবে পেশাগত কারণে কিছু মানুষকে বাইরে থাকতেই হচ্ছে। যেমন চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও সাংবাদিকসহ আরও কয়েকটি পেশার মাুনষ।

এতো কিছুর মাঝে আমরা হয়তো ভুলে যাই অভুক্ত বা নিম্মআয়ের মানুষের দরজায় খাবার পৌছে দেয়া মানবতার ফেরিওয়ালাদের কথা।

ছবি: খাদ্য সামগ্রীর প্যাকেট তৈরির ব্যস্ততা।

পরিবারের বাঁধা সত্ত্বেও আপনার দরজায় খাবার পৌছে দিতে প্রতিনিয়িত ছুটে বেড়াচ্ছেন তারা। তাদের জীবিকার তাগিদে নয়। নিজের সন্তান ও পরিবার থেকে দুরে থেকেও, আপনার ও আপনার সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেয়াই তাদের মূল কাজ। আপনার মুখে হাসিই যেন তাদের রাজ্যের পাওয়া। সারা দেশেই এমন মানবতার ফেরিওয়ালারা ছুটে চলেছে আপনার  বাড়ির দরজায়।

তারমধ্যে মানবতার সেবক আশুলিয়ার ধামসোনার সমাজ সেবক লুৎফর রহমান, আলহাজ্ব আকবর হোসেন, মনির খান, আনিসুর রহমান ও মানিক মন্ডলসহ অনেকে। তারা ধামসোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের উদ্যোগে বিভিন্ন ওয়ার্ডে খেঁটে খাওয়া মানুষকে খাবার পৌছে দেন । নিজেরা অন্ধকারের আভায় থেকে আপনার ঘরের খোঁজ নিতেই দিন-রাত্রিই তাদের শত ব্যস্ততা।

ছবি: নিম্ম আয়ের মানুষদের তালিকা দেখে নিচ্ছেন।

দেশের সবচেয়ে জনবহুল এই আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়ন। খেঁটে খাওয়া কয়েক লাখ মানুষের বসবাস এই ইউনিয়নে। বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা প্রায় বেকার। ফলে খাবার সংকটে মেটাতে এমন উদ্যোগ।

ঘুরে দেখা যায়, আশুলিয়ার ঘোড়াপীড় মাজার এলাকায় আলহাজ্ব জাফর বেপারী উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে  মানবতার এই ফেরিওয়ালারা কাজ করছেন। নিম্ম আয়ের মানুষের তালিকা তৈরি, যেন সঠিক মানুষটিই যেন খাবার পায়। তাদের খোঁজ নেয়া, তারপর বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী কিনে প্যাকেট তৈরি। তারপর নির্দিষ্ট এলাকায় পৌছে দেয়া। এভাবেই সকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা।

নিম্ম আয়ের মানুষরা জানান, কাজ নেই, ঘরে খাবারও নেই। এমন অবস্থায় তারা আমাদের বাড়িতে খাবার পৌছে দিচ্ছেন। না হলে না খেয়েই থাকতে হতো। তাদের জন্য দোয়া রইলো।

কথা হয় সমাজ সেবক লুৎফর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, এমন পরিস্থিতিতে ঘর থেকে বাইরে আসতে পরিবারের বাঁধাসহ নানা প্রতিবন্ধকতা থাকে। তবে মানুষের কল্যানে কাজ করা অন্যরকম নেশা। সেই টানেই ছুটে আসা। দেশের বিত্তবানদের প্রতি অনুরোধ মানুষের কল্যানে এগিয়ে আসুন। আপনার সহযোগিতায় বেঁচে থাকবে আপনার প্রতিবেশি বা এলাকার খেঁটে খাওয়া অসহায় মানুষ।

ছবি: আতঙ্ক ও শত ব্যস্ততার মাঝেও মানবসেবার তৃপ্তির হাসি।

আলহাজ্ব আকরব হোসেন বলেন, প্রথমে সাধারণ মানুষকে অনুরোধ জানাই তারা যেন ঘরের বাইরে না যান। আর তাদের সেবায় কাজ করার চেষ্টা করছি। ধামসোনা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ব্যক্তিগত উদ্যোগে খেঁটে খাওয়া হাজার হাজার মানুষের জন্য ত্রাণ দিচ্ছেন। তার নেতৃত্ত্বে সেই খাবার পৌছে দেয়ার মাধ্যমে মানুষের কল্যাণে কাজ করার চেষ্টা করছি আমরা। কারণ দেশের নানা প্রান্তে আমাদের মত মানুষরা যদি এগিয়ে না আসে খেটে খাওয়া মানুষরা চরম দুর্ভোগে পড়বে।

মনির খান জানান, যতটুকু পারছি নিজেদের সুরক্ষা বজায় রেখে মানব কল্যাণে কাজ করছি। মানবতার সেবায় কাউকে না কাউকে এগিয়ে আসতেই হবে। আর মানুষের জন্য কাজ করার অন্যরকম আত্মতৃপ্তি খুঁজে পাই।

আনিসুর রহমান জানান, বাইরে থাকি বলে পরিবার অনেক দুশ্চিন্তায় থাকে। এরমাঝেও মানুষের জন্য কাজ করছি। দেশ ও পরিবার বাঁচাতে সবার প্রতি অনুরোধ আপনারা ঘরে থাকুন।

আশুলিয়ার সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি ইমাম হোসেন জানান, মানবতার সেবায় জন্য এমন মানুষরা আছেন বলেই দেশ বেঁচে আছে। বিশ্বব্যাপী এমন দুর্যোগ মোকাবেলা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়।  তাই স্যালুট জানাই এমন মানবতার সেবকদের প্রতি। এগিয়ে  আসুন, দেশের ক্রান্তিকালেই আপনার পরিচয়।

/আরএম

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close