দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম

লবণাক্ত পানিতে দাঁড়িয়েই ঈদের নামাজ পড়লেন কয়রাবাসী

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ ২০০৯ সালের এই দিনে (২৫ মে) উপকূলীয় অঞ্চল লণ্ডভণ্ড হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে। ধসে গিয়েছিল খুলনার কয়রার বাঁধ। তারপর দীর্ঘ ১১ বছর ধরে পাকা বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন কয়রাবাসী। কিন্তু সুফল মেলেনি। কোনোমতে টিকে থাকা বাঁধের কঙ্কালে গত ২০ মে আঘাত হানে আরও একটি প্র্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। এখন বানের পানিতে ডুবে আছে পুরো এলাকা।

দুর্যোগের কবল থেকে নিজেদের সুরক্ষা দিতে স্থানীয় উদ্যোগেই নির্মাণকাজ চলছে কয়রা বেড়িবাঁধের। এই বাঁধ নির্মাণ হয়ে গেলে লবণাক্ত পানির কবল থেকে মুক্তি মিলবে কয়রাবাসীর। তাই সোমবার (২৫ মে) পানির মধ্যে দাঁড়িয়েই ঈদের নামাজ আদায় করেন কয়রার মানুষ। নামাজ শেষ করেই বাঁধ মেরামতের কাজে নেমে পড়েন তারা।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলায় সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসের আঘাতে কয়রার পাউবোর বেড়িবাঁধের ২৭টি পয়েন্ট ভেঙে লবণাক্ত পানিতে তলিয়ে যায়। আর সম্প্রতি আম্ফানের আঘাতে ভেঙেছে ২০টি পয়েন্ট। বাঁধ নির্মাণের কাজে নিয়োজিত স্থানীয় সংগঠন কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, বাঁধ মেরামতের কাজ শেষ না করে কয়রার মানুষ ঘরে ফিরবেন না। লবণাক্ত পানির মধ্যে বসবাস করা কঠিন। কয়রার মানুষ এখন ত্রাণ চায় না, বাঁধ চায়।

দক্ষিণ বেদকাশীর বাসিন্দা আবু সাঈদ খান বলেন, আইলার পর মানুষ বাঁধের ওপর আশ্রয় নিতে পেরেছিল। কিন্তু আম্ফানে বাঁধও ক্ষতিগ্রস্ত হলো, তাই ন্যুনতম আশ্রয়স্থলও নেই। উত্তর বেদকাশি ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সরদার নুরুল ইসলাম বলেন, আইলার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আন্দোলন ধুলিস্যাৎ করে দিলো আম্পান। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হলে এখন কয়রার মানুষকে এতো ভোগান্তি পোহাতে হত না। কয়রা সদর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হরেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, আইলার পর থেকে এ জনপদের মানুষ বেড়িবাঁধ নিয়ে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করেছেন। আম্পানের আঘাতে সেই যুদ্ধ আবার নতুনভাবে শুরু করতে হলো।

কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, বেড়িবাঁধে দাবিতে কয়রাবাসীর আন্দোলনে আজকের উদ্যোগ নতুনমাত্রা যুক্ত হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিজস্ব কিছু ঠিকাদার দিয়ে করা কাজের মান ছিল নিম্নমানের। এখানে ভাল ফসল হয়, মাছ চাষ হয়। এখন কয়রার মানুষ বাঁধ চায়, ত্রাণের দরকার হবে না।

এ বিষয়ে কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিমুল কুমার সাহা বলেন, আইলা বিধ্বস্ত কয়রা এখন আম্ফানে বিধ্বস্ত হয়ে আরও মুখ থুবড়ে পড়েছে। কয়রার ৪টি ইউনিয়ের সমস্ত এলাকা লবণাক্ত পানিতে ডুবে আছে। কয়রার মানুষ এখন স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁধ নির্মাণ করছেন। নির্মিতব্য বাঁধের ওপরেই তারা ঈদের নামাজ আদায় করে আবার কাজে নেমে পড়েছেন।

/এন এইচ

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close