প্রধান শিরোনামবিশ্বজুড়ে

সবচেয়ে বেশি অবনমন পাকিস্তানি রুপির, টাকার স্থান পঞ্চম

ডলারের বিপরীতে এশিয়ান মুদ্রা

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে বৈশ্বিক অর্থনীতি। সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে। সামাল দিতে হচ্ছে মূল্যস্ফীতির চাপ। শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা দেশগুলোরও মুদ্রামানের অবনমন ঘটছে। যার ধাক্কা লাগছে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতিতে। এমন পরিস্থিতিতে দক্ষিণ এশিয়ার দুর্বলতম অর্থনীতির দেশগুলোর অবস্থা আরো দুর্বল হচ্ছে। বৈশ্বিক মুদ্রাবাজারের এ অস্থিরতায় সবচেয়ে বেশি দুর্বল অবস্থান পাকিস্তানি রুপির। বাংলাদেশী টাকা পঞ্চম স্থানে। মুদ্রার অবমূল্যায়নের সাম্প্রতিক তথ্য বিশ্লেষণে এমন চিত্রই প্রকাশ পাচ্ছে।

রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধাবস্থার শুরু হয় গত ফেব্রুয়ারি মাসে। ওই সময়ে বিশ্বের মুদ্রাবাজার অস্থির হতে শুরু করে। এ প্রেক্ষাপটে গত ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ডলারের বিপরীতে এশিয়ার কতিপয় দেশের মুদ্রার অবমূল্যায়ন পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেছে বণিক বার্তা। দেখা যাচ্ছে ডলারের বিপরীতে সবচেয়ে দুর্বল হয়েছে মোট ১৩টি দেশের মুদ্রা। বাংলাদেশসহ দেশগুলোর মধ্যে আছে পাকিস্তান, জাপান, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন, তাইওয়ান, ভারত, মালয়েশিয়া, চীন, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর ও হংকং।

মূল্যমান পতনের বিচারে ১ জানুয়ারি থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত এশিয়ার দুর্বলতম মুদ্রা ছিল পাকিস্তানি রুপি। আলোচ্য সময়ে ডলারের বিপরীতে মুদ্রাটির অবমূল্যায়ন হয়েছে ২৬ দশমিক ৩১ শতাংশ। পাকিস্তানি রুপির পর সবচেয়ে বেশি পতন হয়েছে জাপানি ইয়েনের। গত সাত মাসে মুদ্রাটির অবমূল্যায়ন হয়েছে ১৬ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।

মূল্যমান সবচেয়ে বেশি কমেছে এমন তৃতীয় মুদ্রা হলো থাই বাথ। জানুয়ারি মাসের তুলনায় গতকাল পর্যন্ত মুদ্রাটির অবমূল্যায়ন হয়েছে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ। পতন বেশি হয়েছে এমন চতুর্থ মুদ্রা হলো দক্ষিণ কোরিয়ার ওন। এ সময়ে মুদ্রাটির অবমূল্যায়ন হয়েছে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। ওনের পর মুদ্রার বড় ধরনের পতনের তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশী টাকা। গত সাত মাসে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান কমেছে ৯ দশমিক ৪০ শতাংশ।

সবচেয়ে বেশি দুর্বল হয়েছে এমন মুদ্রাগুলোর মধ্যে ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে ফিলিপাইনের পেসো। গত প্রায় সাত মাসে মুদ্রাটির পতন হয়েছে ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। দুর্বল হওয়া মুদ্রাগুলোর মধ্যে ফিলিপাইনের পেসোর পর আছে তাইওয়ানিজ ডলার। গত সাত মাসে এ মুদ্রার অবমূল্যায়ন হয়েছে ৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এছাড়া ভারতীয় রুপির পতন হয়েছে ৬ দশমিক ৭১ শতাংশ। মালয়েশিয়ার রিঙ্গিতের পতন হয়েছে ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ। চীনা মুদ্রা রেনমিনবির অবমূল্যায়ন হয়েছে ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। ইন্দোনেশিয়ার রুপিয়ার পতন হয়েছে ৪ দশমিক ২৮ শতাংশ। সিঙ্গাপুর ডলারের পতন হয়েছে ২ দশমিক ৭৩ শতাংশ। আর হংকং ডলারের পতন হয়েছে শূন্য দশমিক ৭ শূন্য শতাংশ।

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের মুদ্রার অবস্থান সম্পর্কে মূল্যায়ন জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বণিক বার্তাকে বলেন, ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় মূল্য আজ ১০৮ টাকা বলে জেনেছি। এতে অবশ্যই বাংলাদেশী মুদ্রার দুর্বলতা প্রকাশ পাচ্ছে। মুদ্রাবাজারের ওপর বিশেষ করে ডলারের বাজারের ওপরে খুব শক্তিশালী নজরদারি নেই বাংলাদেশে। কেউ কেউ হয়তো এর সুযোগ নিচ্ছে। সে কারণেই হয়তো অস্বাভাবিক মূল্য দেখা যাচ্ছে। এটা স্পষ্ট যে পর্যায়ক্রমে মুদ্রা দুর্বল হচ্ছে। বাজারের অস্বাভাবিকতাকে আলাদা করে মূল্যায়ন করতে হলে এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মতো একই মাত্রায় বাংলাদেশের মুদ্রাও দুর্বল হচ্ছে। মুদ্রার অবমূল্যায়ন আরো হতে পারে। কিন্তু উদ্বেগের কারণ হলো পরিস্থিতি মোকাবেলায় যে পদক্ষেপগুলো নেয়া হচ্ছে সেগুলোর কার্যকারিতা দেখা যাচ্ছে না। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে ডলার ছেড়ে দিচ্ছে, সে বিষয়ে সচেতন হওয়ার প্রয়োজন আছে। কারণ যে উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ছেড়ে দিচ্ছে, সেই উদ্দেশ্য পূরণ না হয়ে হয়তো ডলার নির্দিষ্ট কিছু হাতে চলে যাচ্ছে। ব্যাংকগুলোর ফরেন এক্সচেঞ্জ লেনদেন, ডিলারদের লেনদেন, পাচারের ঘটনা, ব্যক্তি পর্যায়ে লেনদেন—এ বিষয়গুলো নিয়মিতভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারির মধ্যে আনা দরকার।

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close