প্রধান শিরোনামসাক্ষাৎকার

সিনেমা নিয়ে স্বপ্ন দেখি বড় কিছু করার-

ঢাকা অর্থনীতি: ১৮৯৬ সাল। ভাই অগাস্ত ও লুইস লুমিয়েরের বানানো ছবি দ্য অ্যারাইভাল অব আ ট্রেন দেখানো হবে। ছবি শুরু হলো। পর্দাজুড়ে এক বিশালাকার ট্রেন। সেই ট্র্রেন ধেয়ে আসছে দর্শকের দিকে। এই দেখে পড়িমরি করে দর্শকেরা সব বের হতে শুরু করলেন হল থেকে। এই বুঝি ট্রেনটা চাপা দিল! সেদিন আশ্বর্য বিস্ময়ে মানুষ সিনেমা হল থেকে বের হলেও বর্তমানে সিনেমায় নোংরামি অশ্লীলতা, নতুন কোন স্বপ্ন না  থাকায় মানুষ সিনেমা হল থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। সিনেমার এই দু:সময়ে সিনেমা নতুনত্ত্ব নিয়ে আসার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কিছু তরুণেরা। সিনেমা পেশা হিসেবে নয়, যারা জীবনের স্বপ্ন হিসেবে বেছে নিয়েছে। যারা সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলিয়ে নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখেন। সেরকমই একজন নির্মাতা মো. আহসান ইমাম। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনার পাঠ চুটিয়ে বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের শিক্ষকতা করছেন।শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি ২০১৭ সালে সিনেমা কম্পেনডিয়াম তৈরি করেন যা ঢাকা ফ্লিম ফেস্টিভাল-১৭ প্রদর্শন করা হলে, তরুণ ফিল্ম মেকার-১৭ এওয়্যার্ড অর্জন করেন তিনি। ছবিটি বাংলাদেশসহ ভারত ও নেপালের ফিল্ম ফেস্টিভালে প্রদর্শন করা হয়। প্রথম ছবির সাফল্যের পর তিনি  তৈরি করেন জার্নি, রিফ্লেকশন অফ লাইফ, মিশন কাশ্মির।

আহসান ইমামের সিনেমা নিয়ে স্বপ্ন, তার পিছনের গল্প ও বর্তমান অবস্থা জানাচ্ছেন ঢাকা অর্থনীতির জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ইমরান হোসাইন হিমু।

ঢাকা অর্থনীতি: স্যার, কেমন আছেন?

আহসান: সব মিলিয়ে মোটামুটি ভাল আছি।

ঢাকা অর্থনীতি: আপনার প্রথম সিনেমেকার হওয়া গল্পটা কি ছিল?

আহসান: টাঙ্গাইলে মফস্বলে আমি বড় হয়েছি। ছোটবেলা থেকেই আমি সিনেমার স্বপ্ন দেখতাম। নতুন সিনেমার পোস্টার দেখলেই  আমি সিনেমা সম্পর্কে ধারণা করতাম এর কাহিনী কী হবে। তখন বাসায় এসে সেই পোস্টারগুলো আলাদাভাবে এঁকে টাঙ্গিয়ে রাখতাম ।  আমার মনে হত আমার সিনেমা হলে চলছে, তার পোস্টার এখনে ঝুলছে। তখন থেকেই ভাবি একদিন আমিও সিনেমা তৈরি করবো। তারপর ২০১৭ সালে আমার এক বন্ধুর সাথে নেপালে সিনেমা ফেস্টিভাল ওয়ার্কশপে যাই। সেই ফেস্টিভালের ডিরেক্টর বাইশ তেইশ বছরের এক তরুণী প্রশ্না দঙ্গল। এত অল্প বয়সেই সে যদি এই পযার্য়ে আসতে পাবে তাহলে আমরাও পারবো । সেখানেই সিদ্ধান্ত নিলাম দেশে এসে সিনেমা তৈরি করবো। তারপর দেশে এসে ঢাকা ফিল্ম ফেস্টিভালের সাথে কথা বললাম । ইরানি ফিল্ম ডিরেক্টর ওভিদিও সালাজার বাংলাদেশে আসলে ১০ দিনের একটা ওয়ার্কশপ করলাম । তার সাথে কথা বলে কম্পেনডিয়াম সিনেমাটি তৈরি করে ফেললাম।

ঢাকা অর্থনীতি: কম্পেনডিয়াম সিনেমার ধারণা কোথায় পেলেন?

আহসান: আমার ছাত্রদের আল মাহমুদের অন্তরভেদী অবলোকন পড়াচ্ছিলাম। লেখক  মানুষের মৃত্যু ও মৃত্যুর সময়কার মনস্তাত্তিক অবস্থান সুন্দরভাবে তুলে ধরেছে । তখন আমার মনে হতো কবিতাগুলো এক একটি চিত্রকল্প। আমি তখন ভাবতে শুরু করি আমি যদি এই চিত্রকল্পটা দেখতে পারতাম। এই দেখার স্বপ্ন নিয়েই কম্পেডিয়াম ছবিটা তৈরির সিন্ধান্ত নেই ।

ঢাকা অর্থনীতি: আপনার জার্নি সিনেমার সম্পর্কে কিছু বলবেন কি?

আহসান: জার্নি ফিল্মটা একেবারে ভিন্নধর্মী। যাত্রাপথে মানুষের মৌনতা ও চলন্ত অবস্থায় মানুষের মৌনবোধ সিনেমার বিষয়বস্তু। যখন বাস,ট্রেন লঞ্চে ভ্রমন করছি তখন আমি মানুষগুলোকে দেখছি তাদের পথ চলার  একটা ছন্দ আছে, সেই ছন্দকে তুলে ধরেছি সিনেমায় ।

ঢাকা অর্থনীতি: সিনেমা নিয়ে কতদূর যাওয়ার স্বপ্ন ?

আহসান: বর্তমানে আমি বড় সিনেমার হাতেখড়ি হিসেবে ছোট ছোট সিনেমায় কাজ করছি। সিনেমা ভাষা বুঝতে শুরু করেছি। সিনেমার উপর ওয়ার্কশপ গুলোতে যাচ্ছি। ভারতের গোহাটিতে সিনেমেকার এন্ড ফিল্ম ক্রিটিসিজম এর উপর কোর্স করেছি। মানুষের ভালবাসা অনুপ্রেরণা পেলে বড় সিনেমা তৈরি  করবো আশা করছি।

ঢাকা অর্থনীতি: বর্তমানে কোন সিনেমা নিয়ে কাজ করছেন কী?

আহসান: ভারতের সিনেমেকার সন্দীপ রুদ্রর সাথে কথা হয়েছে। স্ক্রিপও তৈরি করা হয়েছে। সময় পেলেই নতুন সিনেমার কাজ শুরু করবো।

ঢাকা অর্থনীতি: আপনি কী কখন অভিনয় করেছেন বা করার ইচ্ছা আছে?

আহসান: কবিতা লিখেছি, আবৃত্তি করেছি কিন্তু অভিনয় করা কখন হয়নি। আমি যখন ক্যামরা পিছনে থেকে ডিরেকশন দেই, অনেকেই আমাকে বলে আপনার তো চেহারা ভাল, ক্যামেরার সামনে যাওয়া উচিৎ। অভিনয়টা আমার কাছে অনেক কঠিন,  ক্যমেরা সামনে যাওয়ার  ইচ্ছা আপাতত নেই।

ঢাকা অর্থনীতি: সিনেমা তৈরির সময় কোন মজার ঘটনা নিশ্চয় আছে?

আহসান: জার্নি সিনেমার চিত্র ধারনের জন্য ঢাকায় মানুষের ভিড়ের ভিতর ক্যামরা  নিয়ে দাড়িয়ে আছি , তখন আমার সহকর্মী রিসানকে ও আমাকে দুটি মেয়ে দুদিক ধাক্কা দিয়ে চলে গেলো। কম্পেনডিয়াম সিনেমায় ছোট্ট  একটা মেয়ের মৃত্যুর  দৃশ্য ধারণ করতে একদিন সময় লেগেছে। তাকে কোনভাবে শুয়ে রাখতে পারছিলাম না, শুধু হাসে।

ঢাকা অর্থনীতি: আপনি বাংলার সংস্কৃতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ান, বাংলার সমাজ সংস্কৃতি নিয়ে কোন সিনেমা তৈরি পরিকল্পনা আছে কী?

আহসান: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকসংস্কৃতি নিয়ে পড়ালেখা খাতিরে মাঠ পর্যায়ে গিয়ে নিম্ন স্তরের মানুষের চালচলন, কথা বলার ধরণ, তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পেরেছি। সময় ও সুযোগ পেলেই বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষদের নিয়ে সিনেমা তৈরি করবো।

ঢাকা অর্থনীতি: সিনেমা প্রযোজনা ও শিক্ষকতা দুটোকে সামনের দিকে কিভাবে নিয়ে যাবেন?

আহসান: শিক্ষকতা একটা মহান পেশা। যতদিন এই পেশায় আছি আমরা প্রথম অগ্রাধিকার আমার ছাত্ররা পাবে। অবসর সময়ে আমি সিনেমা নিয়ে ভাবি, স্ক্রিপ্ট লিখি, সিনেমা তৈরি করি। যদি ভবিষ্যতে দেখি আমি সিনেমাকে নতুন কিছু দিতে পারবো, মানুষের ভালবাসা পেয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চেষ্টা করবো।

ঢাকা অর্থনীতি: বর্তমানে আপনার সময় কাটছে কিভাবে?

আহসান: বর্তমানে আমি পিএইচডি করতে ব্যস্ত থাকায় সিনেমাগুলো শুধু ফিল্ম ফেস্টিভালে পাঠাচ্ছি। সময় পেলেই বিভিন্ন জায়গায় প্রদর্শনী করছি। পিএইচডি শেষ হলে পুরোদমে সিনেমা নিয়ে কাজ শুরু করবো।

ঢাকা অর্থনীতি: সিনেমা প্রেমীদের উদ্দেশ্যে কি বলবেন?

আহসান: সিনেমা মানুষের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতে শিখায় । একটু মুখের হাসি আপনার জীবনকে সহজ করে দিতে পারে। সিনেমা এক মুহূর্তে বহুকাল ধরে চলে আসা অন্যায় কুসংস্কার মুছে ফেলতে পারে। সিনেমা দেখুন ,ভাবতে শিখুন, কি বলতে চেয়েছে সেখানে সেটা অনুধাবন করুন। তাহলেই সিনেমার স্বার্থকথা পাওয়া যাবে।

ঢাকা অর্থনীতি: আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য ঢাকা অর্থনীতি পরিবারের পক্ষ থেকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ।

আহসান: ঢাকা অর্থনীতি পরিবারকেও অনেক ধন্যবাদ।

/এনএ

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close