বিনোদন

হাসির রাজা দিলদারের স্মৃতি আজ বিমলিন

মোঃ রোকনুজ্জামান মনি, নিজস্ব প্রতিবেদক : সিনেমাকে বলা হয় জীবনের দর্পন। সিনেমার অনেক ঘটনায় আমাদের জীবনের সাথে মিলে যায়। এমনও হয় অনেক ঘটনা আমাদের কাদায়, মনকে করে আছন্ন। নিয়ে যায় পুরনো স্মৃতির কাছে। কষ্ট-বেদনায় মন যখন আচ্ছন্ন হয়ে থাকে তখনই হাসির সুবাস ছড়িয়ে হাজির হতে হয় একজন কৌতুক অভিনেতাকে । তার হাঁটা-চলা, বাচন ভঙ্গি, অভিনয়ের মাধম্যে ভরিয়ে দিতে হয় দর্শক হৃদয়কে , কিছুক্ষণের জন্য দর্শককে ডুবিয়ে রাখতে হয় হাস্যরসে।

বর্তমান সময়ে নির্মিত বাংলা সিনেমায় কৌতুক অভিনেতাদের তেমন দেখা না মিললেও , এক সময় বাংলা সিনেমায় দেখা মিলতো অনেক কৌতুক অভিনেতার।

বাংলা সিনেমা জগতে অনেক কৌতুক অভিনেতার মধ্যে এমন একজন ছিলেন, যার হাঁটা-চলা, বাচন ভঙ্গি, অভিনয়ের মাধম্যে তৈরী হত হাসির জগত। ভুলিয়ে দিতেন দুঃখ , ক্লান্তি,লেশ। বুঝতে পারছেন কার কথা বলছি ? তিনি আর কেউ নন , তিনি আমাদের বাংলা সিনেমার কৌতুক কিংবদন্তী দিলদার ।

১৯৭৫ সালে ‘কেন এমন হয়’ ছবির মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করা এই অভনেতা তার অভিনয় শৈলী দিয়ে দর্শক হৃদয়ে জায়গা দখল করে নেন।

কৌতুক অভিনেতা হিসেবে বাংলা সিনেমায় অভিষেক হওয়া এই অভিনেতার জনপ্রিয়তা এতটাই তুঙ্গে ছিল যে, তাকে নায়ক করেই নির্মাণ করা হয়েছিল ‘আব্দুল্লাহ’ নামে একটি চলচ্চিত্র।

বাস্তবতার দৈনন্দিন ঘানি টানা শেষে ক্লান্ত শরীরে সাধারণ দর্শক যখন তার অভিনয় দেখতেন, তখন তারা মুগ্ধ হতেন, প্রাণ খুলে হাসতেন, ভুলে যেতেন সারা দিনের সব কষ্ট।

দিলদার মানুষের মনে এতটাই জায়গা দখল করতে পেরেছিলেন যে , সিনেমা চলা কালে মানুষ তার সংলাপ শোনার জন্য উৎসুক হয়ে থাকতো। তাই দর্শকের চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে অনেক সময় পরিচালক সিনেমায় তার জন্য তৈরী করতেন আলাদা স্ক্রিপ্ট, এমনকি অনেক সময় সিনেমার শেষ সংলাপটাও বলাতেন তার মুখ থেকেই।

আশি-নব্বইয়ের দশকে এমন একটা অবস্থা তৈরী হয়েছিল যখন কৌতুক আর দিলদার এক সুতোয় গাঁথা ছিল। শুধু তাই নয়, এমন একটা সময় ছিলো যখন, কেউ কাউকে হাসালেই তাকে ‘দিলদার’ উপাধি দেয়া হতো। বলা চলে প্রবাদে পরিণত হয়েছিলেন এই অভিনেতা।

( ১৩ জানুয়ারি ১৯৪৫-জুলাই -১৩, ২০০৩) ৫৮ বছরের স্বল্প জীবনে তার রেখে যাওয়া ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ ‘বিক্ষোভ’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘কন্যাদান’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘সুন্দর আলী জীবন সংসার’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘শান্ত কেন মাস্তান’গাড়িয়াল ভাই,অচিন দেশের রাজকুমার,প্রেম যুমুনা,বাশিওয়ালা সিনেমাগুলো এখনো তাকে বাচিয়ে রেখেছে দর্শক হৃদয়ে । এমনকি ২০০৩ সালে সেরা কৌতুক অভিনেতা হিসেবে ‘তুমি শুধু আমার’ চলচ্চিত্রের জন্যে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন তিনি ।

চাঁদপুর জেলার সদর উপজেলার শাহতলী গ্রামে জন্ম নেওয়া এই অসম্ভব জনপ্রিয় মানুষটি ২০০৩ সালের ১৩ জুলাই তারিখে মারা যান । পরে তাকে ঢাকার ডেমরায় অবস্থিত সানারপাড় এলাকার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিএনপি’র অঙ্গ সংগঠন জিয়া সাংস্কৃতিক সংসদের সভাপতি ছিলেন । কিন্তু মারা যাওয়ার পর প্রথম তিন-চার বছর সংগঠনটি দিলদারের মৃতুবার্ষিকী পালন করলেও এখন তাকে নিয়ে কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না।

নতুন প্রজন্মের অনেকেই তার নাম পর্যন্ত জানে না ! জানে না আমাদেরও একজন কিংবদন্তী কৌতুক অভিনেতা ছিলেন ! জানে না আমাদের বাংলা সিনেমারও একসময় স্বররণ যুগ ছিল !

তাহলে কি কালের বিবর্তনে এভাবেই অবহেলায় হারিয়ে যাবে বাংলার এক একটি কিংবদন্তী ?

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close