দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম

২০ দিনে চলন্ত বাসে ৫ যৌন হয়রানি!

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: চট্টগ্রামে ২০ দিনে চলন্ত বাসে ৫ যৌন হয়রানি হয়রানির ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীরা এ সব ঘটনায় প্রতিবাদ করায় ঘটনাগুলো সামনে আসে এবং বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।

এর মধ্যে সোহাগ পরিবহনের বাসচালক, সহকারী ও সুপারভাইজারকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।

অন্য তিনটি ঘটনায় ভ্রাম্যমাণ আদালত দুই যাত্রীকে কারাগারে প্রেরণ করেছে। আরেকটি ঘটনায় পুলিশের ভয়ে পালাতে চলন্ত বাস থেকে লাফ দিতে গিয়ে পেছন থেকে আসা অপর বাসের চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলে মারা গেছে একজন।

পুলিশ সূত্র জানায়, ১৪ই ডিসেম্বর চলন্ত বাসে এক যাত্রীর হাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) মার্কেটিং বিভাগের এক ছাত্রী যৌন হয়রানির শিকার হন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর গেইটে ঘটনাটি ঘটার পর অন্য শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পুলিশে সোপর্দ করেন। পরে এ ঘটনায় অভিযুক্ত জামাল উদ্দিন (৩৫) কে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। হাটহাজারী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সম্রাট খীসা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।

গত ১১ই ডিসেম্বর বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগরীর শাহ আমানত সেতুর বাকলিয়া থানার অংশে চলন্ত বাসে সিটের ফাঁক দিয়ে দুই বোনকে যৌন হয়রানি করছিল পেছনের সিটে বসা ইসমাইল হোসেন (২৫) নামে এক যাত্রী। এ সময় এক বোন চিৎকার শুরু করলে বাসের অন্য যাত্রীরা তাকে ধরে পুলিশে দেয়ার চেষ্টা করে। আর পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে চলন্ত বাস থেকে লাফ দিয়ে পালাতে গিয়ে পেছন থেকে আসা অন্য বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয় বলে জানান, বাকলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নেজাম উদ্দিন।

গত ৮ই ডিসেম্বর রোববার সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম মহানগরীর মুরাদপুর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গামী ৩ নং একটি বাসে যৌন হয়রানির শিকার হন চবি ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১নং গেইট থেকে ওই যাত্রীকে আটক করে বাসের অন্য যাত্রী ও শিক্ষার্থীরা প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির নিকট হস্তান্তর করেন।
সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির মাধ্যমে তাকে হাটহাজারী থানায় হস্তান্তর করা হয়। অভিযুক্ত যাত্রী মো. মানিক মিয়ার বাড়ি হাটহাজারী উপজেলার মন্দাকিনি এলাকায়। এ ঘটনায় ভ্রাম্যমাণ আদালত মানিক মিয়াকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয় বলে জানান, হাটহাজারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাসুদ আলম।

গত ৩রা ডিসেম্বর চবি লোকপ্রশাসন বিভাগের এক ছাত্রী কক্সবাজার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পথে চট্টগ্রাম মহানগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসের চালক ও সুপারভাইজারের হাতে যৌন হয়রানির শিকার হন। এ ঘটনায় তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা এখন কারাগারে রয়েছেন।

এর আগে গত ২৭শে নভেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে ফেরার পথে নগরীর দুই নম্বর গেইট এলাকায় সোহাগ পরিবহনের একটি বাসে (ঢাকা মেট্রো ব-১৫৬০৭৭) যৌন হয়রানির শিকার হন চবি’র মার্কেটিং বিভাগের এক শিক্ষার্থী। ২৮শে ডিসেম্বর সকালে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের নিজের টাইমলাইনে পোস্ট দেয়ার পর জানাজানি হয় বিষয়টি। এরপর অনুসন্ধান চালিয়ে পুলিশ সোহাগ পরিবহনের বাসচালক এহসান করিম (২৭) ও তার সহকারী ফররুখ আহমেদ ভুট্টো (৩৫) ও সুপারভাইজার আলী আব্বাস (৩৫)কে গ্রেপ্তার করে। তাদের বাড়ি কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার হারবাং গ্রামে।

এ বিষয়ে  চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর প্রফেসর এস. এম. মনিরুল হাসান বলেন, চলন্ত বাসে যৌন হয়রানির ঘটনা অহরহ ঘটছে। কিন্তু এর প্রতিবাদ উঠছে শুধুমাত্র চবি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। ভুক্তভোগী সব নারী ও সচেতনমহলের উচিত এ বিষয়ে প্রতিবাদী হয়ে ওঠা। তাহলেই চলন্ত বাসে নারীদের যৌন হয়রানি করার সাহস আর কেউ করবে না।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম বলেন, চলন্ত বাসে নারী যাত্রীরা কোনো সময় নিরাপদ ছিল না। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে সাম্প্রতিক সময়ে যৌন হয়রানির ঘটনাগুলো দ্রুত প্রকাশ পাচ্ছে। শুধুমাত্র চবি’র ছাত্রীরাই প্রতিবাদ করলেই হবে না সকল মহলকে প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠতে হবে।

/এনএ

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close