কৃষিপ্রধান শিরোনামশিল্প-বানিজ্য

৭ মাসে ১৮ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ চলতি অর্থবছরের সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ব্যাংকগুলো ১৮ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণ করেছে, যা লক্ষ্যমাত্রার ৬০ দশমিক ৪৫ শতাংশ বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে জানা গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ সময়ে রাষ্ট্রমালিকানার ব্যাংকগুলো সাত হাজার ৪৭৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বা লক্ষ্যমাত্রার ৬৩ শতাংশ বিতরণ করেছে। আর বিদেশি ও বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো ১১ হাজার ২০৬ কোটি বা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৫৮ দশমিক ৫১ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, সাত মাসে শস্য খাতে বিতরণ হয়েছে আট হাজার ৯০০ কোটি টাকা। সেচ সরঞ্জাম কিনতে দেওয়া হয়েছে ১৫৪ কোটি, কৃষি সরঞ্জাম কিনতে ১২৯ কোটি, গবাদিপশু এবং হাঁস-মুরগির খামারে তিন হাজার ৯৬০ কোটি, মৎস্য খাতে দুই হাজার ২৭১ কোটি, শস্য গুদামজাত এবং বিপণনে ৯৩ কোটি, দারিদ্র্য দূরীকরণ খাতে এক হাজার ১০৩ কোটি এবং অন্যান্য খাতে দুই হাজার ৬৯ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

দেশের খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারের অংশ হিসেবে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশ ব্যাংকও সেই লক্ষ্যে কাজ করছে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ব্যাংকগুলোকে কৃষিঋণ বিতরণ বাড়াতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং তা প্রতিনিয়ত মনিটরিং করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে। এরই অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা আছে, সেসব অঞ্চলে কৃষিঋণ বিতরণ বাড়াতে প্রচার চালানো হয়েছে।

সম্প্রতি কৃষি খাতে ব্যাংকগুলো লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হলে তা অন্য ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণের জন্য এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট কমন ফান্ড (বিবিএডিসিএফ) গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেই নীতিমালা অনুযায়ী, কৃষি ও পল্লি ঋণ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বিতরণ করতে না পারলে অবশিষ্ট অর্থ এই ফান্ডে জমা রাখতে হবে। কৃষি খাতে অধিক ঋণ দিতে সক্ষম ব্যাংকগুলোকে এই তহবিল থেকে অর্থ দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

জানা যায়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশের সব ব্যাংকের জন্য ৩০ হাজার ৯১১ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর জন্য ১১ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা এবং বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকের জন্য ১৯ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত অর্থবছর ব্যাংক খাতে ২৮ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। আলোচ্য সময়ে কৃষিঋণ আদায়ও বেড়েছে। অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) কৃষকদের কাছ থেকে ঋণ আদায় হয়েছে ১৮ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা, যা আলোচ্য সময়ে বিতরণকৃত ঋণের প্রায় সমান। যদিও ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে এই খাত থেকে ঋণ আদায় হয়েছে ১৩ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা।

খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমেছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত কৃষি খাতে খেলাপি ঋণ তিন হাজার ৯০৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ৬২ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এবং মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, কৃষি এবং এসএমই ঋণ বিতরণ বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে সব বিভাগীয় শহরে প্রচার চালানো হয়েছে। কৃষিঋণ বিতরণ বাড়াতে ব্যাংকগুলোকে উদ্বুদ্ধকরণের পাশাপাশি তাদের সতর্ক করা হয়েছে। বলা হয়েছে, কৃষিঋণ বিতরণ না বাড়ালে ৮ নম্বর সার্কুলার অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক কৃষি উন্নয়ন ফান্ডে জরিমানা হিসেবে নির্ধারিত টাকা কেটে রাখা হবে। ফলে তাদের অনেক বেশি জরিমানা দিতে হবে।

/আরএম

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close