দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম

আমেরিকায় না গেলে কিচ্ছু আসে-যায় না ;প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক:মাননিয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা নিজের পায়ে চলব। নিজের দেশকে গড়ে তুলব, কারো মুখাপেক্ষী হয়ে না। কে আমাদের ভিসা দেবে না, নিষেধাজ্ঞা দেবে, ও নিয়ে মাথাব্যথা করে লাভ নেই। ৩০ ঘণ্টা প্লেনে জার্নি করে, আটলান্টিক পার হয়ে ওই আমেরিকায় না গেলে কিচ্ছু আসে যায় না।

শেখ হাসিনা গতকাল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। একই সঙ্গে তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি ও অর্থনৈতিক মন্দায় সৃষ্ট জ্বালানি সংকটের কারণে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতির কথা জানিয়ে বলেন, তাঁর সরকার এই গরমে মানুষের কষ্ট দূর করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

আমেরিকায় না গেলে কিচ্ছু আসে-যায় না

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পৃথিবীতে আরো অনেক মহাসাগর আছে, অনেক মহাদেশ আছে। সেখানেই আমরা যাতায়াত করব।

তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করব। আমাদের অর্থনীতি আরো উন্নত হবে, মজবুত হবে, আরো চাঙ্গা হবে।’

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি তাদের (আমেরিকা) বলব, ভোট যারা চুরি করে, ভোট নিয়ে যারা চিরদিন খেলছে, জনগণের ভাগ্য নিয়ে যারা খেলছে, ওই সন্ত্রাসী দলের দিকে নজর দিন। কানাডার হাইকোর্ট বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সন্ত্রাস ও দুর্নীতির দায়ে আমেরিকা তারেক জিয়াকে ভিসা দেয় নাই। তারা (বিএনপি) আবার তাদের (আমেরিকা) কাছে ধরনা দেয়। এত কিছু বলতে চাই না। শুধু এটাই বলব, যারা অর্থনীতিবিদ, জ্ঞানী-গুণী আছেন…আমরা তো লেখাপড়া এত বেশি জানি না। শুধু দেশের মাটি-মানুষকে চিনি।

বাংলাদেশ, নদী-নালা, খাল-বিল চিনি। বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণ কোথায়, কী করলে ভালো হবে সেটা জানি। সেটাই মাথায় রেখে দেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় নিয়েছি।’
জনগণের প্রতি নিজের আস্থা-বিশ্বাস আছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণ জানে একমাত্র নৌকায় ভোট দিলেই তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। নৌকায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছে, উন্নয়ন পেয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ পেয়েছে।’

দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘জনগণের সঙ্গে, জনগণের কল্যাণে ত্যাগ স্বীকার করলে জনগণ কিন্তু সেটার মর্যাদা দেয়। এই কথাটাই মনে রাখতে হবে। আওয়ামী লীগ ত্যাগ করতে এসেছে, ভোগে বিশ্বাস করে না। সেই কথাটা মাথায় রেখে জনগণের সেবক হিসেবে আমি কাজ করে যাচ্ছি। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। অশুভ শক্তি বাংলাদেশের ভাগ্য নিয়ে যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে, এদের করাল গ্রাস থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।’

বিদ্যুৎ ঘাটতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি। কিন্তু তেলের দাম বেড়ে গেছে, গ্যাসের দাম বেড়ে গেছে, কয়লার দাম বেড়ে গেছে। সেটাই এখন অবাক করার বিষয়, কয়লাই পাওয়া যাচ্ছে না। কাজেই আমাদের কিনে আনতে সমস্যা হচ্ছে। আগে একসময় যারা আন্তর্জাতিকভাবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা করে বেড়িয়েছে, তারাই এখন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা তো লোড শেডিং একদম দূর করে দিয়েছিলাম। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধটা যদি না হতো, আর করোনাভাইরাস যদি দেখা না দিত, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা না দিত, মূল্যস্ফীতি দেখা না দিত; তাহলে কোনো কষ্ট হতো না। কিন্তু আজ আমরা ভেতরে যতই চেষ্টা করি, যে জিনিস আমাদের বাইরে থেকে আনতে হচ্ছে সেটা কষ্ট করে আমাকে জোগাড় করতে হচ্ছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যাই হোক তবু সুখবর যে কাতার ও ওমানের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়ে গেছে। আরো কয়েকটি দেশের সঙ্গে কথা হচ্ছে যাতে আমরা গ্যাস আনতে পারি, এই কষ্ট দূর করতে পারি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি এই বিদ্যুতে একবার যদি মানুষের অভ্যাস হয়ে যায় তারপর যদি বিদ্যুৎ না থাকে কষ্টটা বাড়ে। আর বিএনপি-জামায়াতের সময় তো মানুষ হাহাকার করত। আর বিদ্যুৎ চাওয়ার কারণে কানসাটে খালেদা জিয়া গুলি করে মানুষ হত্যা করেছিল। সারের দাবি করেছিল বলে প্রায় ১৮ জন কৃষক হত্যা করেছে। শ্রমিক মজুরির কথা বলেছিল বলে ১৭ জন শ্রমিককে রোজার সময় হত্যা করেছিল।’

ঢাকার তেজগাঁও থেকে ট্রাকস্ট্যান্ড সরিয়ে ফেলতে সরকার উদ্যোগ নিচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোথায় ভালো জায়গা পাওয়া যায় সেটি দেখা হচ্ছে। সেখানে আধুনিক ট্রাকস্ট্যান্ড যাতে করা যায়। একটু ধৈর্য ধরতে হবে।

ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের ভবন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, এখানে অধিকার সবারই থাকবে। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ও এখানে হবে বলে জানান তিনি। এই অফিসকেই নির্বাচনী অফিস হিসেবে ব্যবহার করব। সবাই কিন্তু ভাড়া দিতে হবে মিটিংয়ের জন্য।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমেদ। বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সালমান ফজলুর রহমান, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান প্রমুখ।

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close