জীবন-যাপনদেশজুড়ে

ডিএমপি’র সহযোগীতায় ভালবাসার সংসার ফিরে পেল মিশরীয় তরুণী 

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: মিশরীয় তরুণী ইমাম, ভালোবেসে বিয়ে করে চাঁদপুরের ত্রিশ বছর বয়সী নূর সুজনকে। বিয়ের পর অনেক স্বপ্ন নিয়ে সুদূর মিশর থেকে বাংলাদেশে চলে এসেছিল ২০২০ সালের অক্টোবরে। তবে আর্থিক ও পারিবারিক বিভিন্ন জটিলতায় ধীরে ধীরে তাদের সংসারে শুরু হয় তিক্ততা। এক পর্যায়ে শারীরিক নির্যাতনও শুরু হয় ইমাম এর উপর। তবে ডিএমপির চেষ্টা ও তত্তাবধানে আজ তাদের সংসারে আবার ফিরে এসেছে সুখ পাখি।

বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) তাদের ফেসবুকের ভেরিফাইড পেজে তুলে ধরে পুরো গল্পটি।
জানা যায়, নূর সুজন ২০০৮ সালে সৌদি আরবে যেয়ে সেখানে খুব ভালো কিছু করতে না পেরে ভিজিট ভিসায় ইন্ডিয়া, নেপাল, মালয়েশিয়া, চীন ঘুরে ২০১৯ সালে তার মামার সহযোগিতায় ট্যুরিস্ট ভিসায় মিশরে যায়। সেখানে ব্যবসা করে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সংগ্রামে নামে সুজন। মিশরে বসবাসরত মামার পরামর্শে মিশরীয় তরুণী ইমাম হুসেন এর সাথে ২০১৯ সালের ৫ মে মিশরীয় আইন অনুযায়ী বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় সুজন।

বৈশ্বিক মহামারী করোনার নেতিবাচক প্রভাবে ব্যবসার ক্ষতি হওয়ায় আর্থিক সংকটে পড়ে সুজন। ইমাম এর পরিবারও কোনো সহায়তা না করায় বাধ্য হয়ে ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা মিশরীয় বধূকে নিয়ে ২০২০ সালের ৬ অক্টোবর বাংলাদেশে চলে আসে। বাংলাদেশেই জন্ম নেয় সুজন-ইমাম এর পুত্র মালেক।

প্রথম দিকে সব ঠিকই চলছিল কিন্তু পরের দিকে শুরু হয় দুই দেশের সংস্কৃতির দ্বন্দ্ব! নূর সুজনের উপার্জন না থাকায় তার পরিবারের অন্য সদস্যরা মিশরীয় বধূকে আর সহ্য করতে পারছিলো না। শুরু হয় সংঘাত। ইমামকে পড়তে হয় কঠিন পরীক্ষায়। দিন দিন বৈরী আবহাওয়া, ভাষা ও সংস্কৃতিগত পার্থক্যে ইমাম এর স্বপ্ন ভেঙ্গে যেতে থাকে। বিভিন্ন অজুহাতে তিক্ততা বেড়েই চলে এবং শারীরিক নির্যাতনও শুরু হয় ইমাম এর উপর। ইমাম এসব কষ্টের কথা তার মাকে জানালে ঘটনার নাটকীয় মোড় নেয়।

ভিকটিমকে নির্যাতনের বিষয়টি তার মা বাংলাদেশের The Embassy Of The Arab Republic of Egypt কে জানায়। ভিকটিমের মায়ের এ অভিযোগ The Embassy Of The Arab Republic of Egypt ডিএমপির ডিপ্লোমেটিক ডিভিশনকে অবহিত করে মেয়েটিকে দ্রুত উদ্ধার করার অনুরোধ করে। ডিএমপির ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশে ওয়ারী বিভাগ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে মিশরীয় নাগরিক ইমাম কে তার স্বামী নূর সুজন এর হেফাজত থেকে ২৬ জুলাই, ২০২১ তারিখ রাতে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।

ডিএমপি ভুক্তভোগী ইমাম এর মানসিক বিপর্যয়কে কাটিয়ে তুলতে বিভিন্ন প্রচেষ্টা নেয়। প্রতিদিন দীর্ঘ সময় নিয়ে কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়। পরবর্তীতে ইমাম এর স্বামী সুজনের সাথে কথা বলার ব্যবস্থা করে। ইমামকে তার ভালোবাসা আর সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য তার স্বামীকে আর একবার সুযোগ দিতে অনুরোধ করে ডিএমপি।
ইমামকে কিছুটা বাংলা বোঝায় উইমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন টিম। অবশেষে ইমাম এই ডিভিশনের নারী পুলিশের কাছে তার মনের সব কষ্ট শেয়ার করে। এই ডিভিশনের কর্মকর্তারা জানতে পারে যে, মিশরীয় ভিকটিম ইমাম আবারও মা হতে যাচ্ছে।

সুজন-ইমাম এর সংসার টিকিয়ে রাখতে এবার বদ্ধপরিকর হন উইমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন এর কর্মকর্তা উপ-পুলিশ কমিশনার হামিদা পারভীন, পিপিএম। মায়ের মমতা দিয়ে তিনি ইমামকে বোঝাতে থাকেন। তার নিরলস প্রচেষ্টা অবশেষে আলোর মুখ দেখে।
পরবর্তী সময়ে মিশর এম্বাসির প্রতিনিধির উপস্থিতিতে ইমাম আবার তার সংসারে ফিরে যাবার এবং স্বামী সুজনের সাথে বাংলাদেশে থাকতে চাওয়ার কথা জানায়। মামলা করার প্রক্রিয়া থেকে সরে আসে ইমাম। কিছু শর্ত সাপেক্ষে আরও একবার সুযোগ দিতে চায় স্বামী সুজনকে।
এভাবেই টিম উইমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের সহায়তায় মিশরীয় তরুণী ফিরে পেল তার ভালোবাসার সংসার।

/ আর এইচ এস

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close