দেশজুড়ে

নিজের ছেলে এমন নৃশংস খুনি; মানতে পারছে না রাসেলের মা

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা ঘটনার পর থেকে ফরিদপুরের সালথা উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের রাঙ্গারদিয়া গ্রামের সাবেক সেনা সদস্য রুহুল আমিনের পরিবারটি হঠাৎ করেই এলাকাবাসীর কাছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। এলাকার চায়ের দোকান থেকে বিভিন্ন আড্ডাস্থলে এখন এই পরিবারটিকে নিয়ে আলোচনা- সমালোচনা চলছে। এর কারণ গত ৬ অক্টোবর রাতে ঢাকার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটের আবাসিক ছাত্র আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার প্রধান আসামি এই পরিবারেরই সন্তান মেহেদি হাসান।

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য রুহুল আমিনের বড় ছেলে মেহেদি হাসান রাসেল। বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। বাবার চাকরির সুবাদে তার ছাত্রজীবনের বেশিরভাগ সময় এলাকার বাইরেই কেটেছে। তাই গ্রামবাসীর সঙ্গে তার তেমন একটা ঘনিষ্ঠতা নেই। ঈদ কিংবা বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান থাকলে এসেছেন গ্রামে। গ্রামের মানুষ তাকে দূর থেকেই চেনে তাকে। তাই তার ব্যক্তিগত জীবন সম্মন্ধে খুব বেশি ধারণা নেই এলাকাবাসীর।

জানা গেছে, ফাহাদের পূর্বপুরুষ ১৯৪২ সালে সালথার এই গ্রামে আসেন। তার দাদা আব্দুল লতিফ মাতুব্বর ব্যবসা করতেন। আব্দুল লতিফ মাতুব্বরের সন্তান রুহুল আমিন সেনাবাহিনীতে চাকরির সুবাদে কর্মজীবন কাটিয়ে দিয়েছেন দেশের বিভিন্ন জেলায়। ২০০৮ সালে চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর এই রাঙ্গারদিয়া গ্রামে বাপদাদার ভিটায় পাকা বাড়ি করেন রুহুল আমিন। তার সংসারে দুই ছেলে দুই মেয়ে ও স্ত্রী। স্ত্রী ঝর্ণা আমান একজন গৃহিনী।

বড় ছেলে মেহেদি হাসান রাসেলের জন্ম ১৯৯৬ সালে। রংপুর জিলা স্কুল থেকে এসএসসি ও ময়মনসিংহ সৈয়দ নজরুল কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ২০১৩ সালে বুয়েটে ভর্তি হয় সে। রাসেলের পরে বড় মেয়ে জান্নাতী মিম গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছেন। আর ছোট মেয়ে অষ্টম শ্রেণি ও ছোট ছেলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে গ্রামের যোগারদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে।

মেহেদি হাসানের বাবা রুহুল আমিনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, টিভি ও পত্রপত্রিকার মাধ্যমে বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার খবর দেখেছেন। তবে তিনি দাবি করেন তার ছেলে এমন কাজ করতে পারেন না। এবং ঘটনার সময় তার ছেলে সেখানে ছিল না।

রুহুল আমিন বলেন, সারা জীবন বাইরে বাইরে চাকরি করে অনেক কষ্টে ছেলেকে মানুষ করে পড়াশুনা করতে বুয়েটে পাঠিয়েছি। সে এমন কাজ করতে পারে না।

আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর ফাঁস হওয়া শেরে বাংলা হলের নিচতলার সিসি টিভির ফুটেজে মেহেদি হাসান রাসেলকে দেখা গেছে, আবরার মৃতদেহকে সামনে রেখে হলের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা বলতে।

বুধবার (৯ অক্টোবর) অবশ্য অধ্যাপক মিজানুর রহমান ছাত্রদের সামনে স্বীকার করেন, ওই মুহূর্তে আবরারের মৃতদেহ সেখান থেকে সরিয়ে ফেলার জন্য তাকে সেখানে উপস্থিত ছাত্রনেতারা চাপ দেন।

তবে সিসি টিভির ফুটেজে নিজের সন্তানকে দেখা যায়নি বলে দাবি করেন মেহেদি হাসান রাসেলের মা ঝর্ণা আমান। তিনি বলেন, আমার সোনা এই হত্যার সঙ্গে জড়িত নয়। আমার ছেলে এমন নৃশংস খুনি হতে পারে না। তাকে সিসিটিভির ফুটেজেও দেখা যায়নি। ষড়যন্ত্র করে তাকে ফাঁসানো হয়েছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই।

সোনাপুর ইউনিয়নের রাঙ্গারদিয়া ওয়ার্ড কাউন্সিলর নান্নু মাতুব্বর বলেন, রাসেলকে এলাকায় কমই দেখেছি। ঈদের সময় ছাড়া তাকে গ্রামে আসতে দেখা যায়নি। ছেলেটি মেধাবী ও ভদ্র বলেই শুনেছি।

ইউপি চেয়ারম্যান খায়রুজ্জামান বাবুল বলেন, গ্রামে রাসেলের পরিবার নিরীহ হিসেবেই পরিচিত। স্থানীয় দলাদলি বা কোনো বিবাদেও তারা জড়ায় না। আর তাদের পরিবার বেশিরভাগ সময় বাইরেই কাটিয়েছে। তবে রুহুল আমিনের ছেলে অনেক মেধাবী এবং ভাল ছাত্র হিসেবে গ্রামে একটা সুনাম আছে। আমাদের বিশ্বাসই হচ্ছে না যে সে এমন একটি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।

প্রসঙ্গত, গত ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলে মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত ফাহাদ কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার রায়ডাঙ্গা গ্রামের বরকত উল্লাহ ছেলে। ওই ঘটনায় পর সন্তানকে হত্যার ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে সোমবার (৭ অক্টোবর) চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী পুলিশ এ মামলায় মেহেদি হাসান রাসেলসহ ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। এর ১০ জনের পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

/আরকে

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close