দেশজুড়ে

নিজের জন্য বরাদ্দকৃত বাড়ি ভাড়া দিয়ে লাখপতি রেল কর্মচারী

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল পাহাড়তলী কন্ট্রোলের বিভাগীয় রেলযান নিয়ন্ত্রক (ডিটিএনএল) শাহিদ হোসেন খোকন। নিজের জন্য বরাদ্দকৃত বাসা বিক্রি করে তিনি হয়েছেন লাখপতি। তার বিরুদ্ধে ২০০৭ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত অবৈধভাবে বাসা বরাদ্দ দিয়ে ৩১ লাখ টাকা আয় করার অভিযোগ রয়েছে।

শাহিদ হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০০৭ সালে তার নামে বরাদ্দ দেওয়া পাহাড়তলীর শহীদ লেইনের এল/২৪৩-বি বাসাটি ৪ লাখ টাকার বিনিময়ে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কাছে বিক্রি করে দেন। এরপর ২০১৩ সালে ষোলশহর স্টেশনের ই/৮ নম্বর বাসাটি নিজের নামে বরাদ্দ নেন। ৪ মাস না যেতেই ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর একজন প্রহরীর কাছে ডিটিও অফিসের অফিস সহকারী জাহিদুল ইসলামের মাধ্যমে বাসাটি বিক্রি করে দেন।

ওই সময়ে টাইগার পাসের ১৪/০৩ নম্বর বাসাটি নিজের নামে আবারও বরাদ্দ নেন শাহিদ। কয়েক মাস না যেতেই সেটিও এক লাখ টাকা দিয়ে বিক্রি করে দেন তিনি।

৫ মাসের মাথায় ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমবাগান কলোনির টি/১৫/বি নম্বর বাসাটি নিজের নামে বরাদ্দ নেন। এটিও ডিটিও অফিসের ওই অফিস সহকারীর মাধ্যমে সাড়ে ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়।

দুই বছর পর ২০১৬ সালের মার্চে ঝাউতলা রেলওয়ে কলোনির ২৪/০২/এল নম্বর বাসাটি আবারও নিজের নামে বরাদ্দ নেন শাহিদ। ওই বছরের অক্টোবরে বাসাটি কয়েক লাখ টাকার বিনিময়ে আবারও বিক্রি করে দেন তিনি।

ওই বছর পাহাড়তলী বাজারে সড়কের পাশে ই/৯ নম্বরের বিশাল এক বাংলো নিজের নামে বরাদ্দ নিয়ে সেটিকে পরিণত করেছেন নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। ওই বাসাকে ঘিরে তিনি ৫টি দোকান ও একটি কোচিং সেন্টার বসিয়ে ভাড়া দিয়েছেন। এ জন্য খোকন কোচিং সেন্টারের মালিক থেকে নেন ১৮ লাখ টাকা ।

সূত্র জানায়, শাহিদ হোসেন (খোকন) এসব অনিয়ম করতে পেরেছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কয়েকজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার সহযোগিতায়। তাদের প্রশ্রয়ে ২০০৭ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত তিনি অনিয়ম করে গেলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে আছেন।

চলতি বছরের ২৬ জুন রেলওয়ের অতিরিক্ত সচিব বরাবর বিভাগীয় ব্যবস্থাপক চট্টগ্রামের অধীনস্থ দফতরের কর্মকর্তাদের লিখিত অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এসব অনিয়ম তুলে ধরা হয়। এছাড়া গত ৮ ও ১৫ জুলাই রেলওয়ের সচিবের কাছে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়।

অভিযোগের বিষয়ে শাহিদ হোসেন (খোকন) বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে-সব মিথ্যা ও বানোয়াট।

তবে ২০০৭ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত নিজের নামে ছয়বার বাসা বরাদ্দ নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘বাসা বরাদ্দ নেওয়ার পর ছেড়ে দিতে হয়েছে। কারণ বাসাগুলো আমার জন্য উপযুক্ত ছিলো না’।

সর্বশেষ বরাদ্দ পাওয়া বাংলোতে দোকান ও কোচিং সেন্টারকে ভাড়া দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দোকান ও কোচিং সেন্টার আমি আসার আগে থেকেই ছিল। আমি আসার পর তাদের চলে যেতে বলেছি। কিন্তু তারা এখনও যায়নি। আমি কোনো টাকার লেনদেন করিনি’।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ডিসিও আনসার আলী বলেন, কিছু অনিয়মের বিষয়ে শাহিদ হোসেনের বিরুদ্ধে একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। কমিটি দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিবে।

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close