দেশজুড়ে

নৃশংস সব ঘটনার স্বাক্ষী ২০১৯

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ প্রকাশ্যে কুপিয়ে-বা পুড়িয়ে, লাঠিপেটা করে হত্যার মতো বিভৎস ঘটনার সাক্ষী ছিল গেলো ২০১৯ সাল। নুসরাত থেকে রিফাত কিংবা বুয়েটের আবরার হত্যা ছাড়াও বছরের বড় সময় জুড়ে আলোচনায় ছিল ক্যাসিনোকাণ্ড।
বছরের প্রথমভাগে ৬ই এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির হত্যা দাগ ফেলে পুরো দেশে। আলোচনায় আসে নারীর নিরাপত্তা। তবে আশার কথা- তনুর পরিণতি হয়নি নুসরাত হত্যা মামলার।

মৃত্যুর আগে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বিচার চান প্রধানমন্ত্রীর কাছে। দ্রুততম সময়ে বিচার শেষ করে ১৬ জনের ফাঁসির রায় দিয়েছে আদালত।বাদ যাননি ক্ষমতাসীন দলের নেতারাও।

মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যা:

যৌন নির্যাতনের অভিযোগে ২৭শে মার্চ ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাকে আটক করে পুলিশ। পরে ৬ই এপ্রিল অধ্যক্ষের সহযোগীরা পরীক্ষা কেন্দ্রের ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা তুলে না নেয়ায় তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে মৃত্যুশয্যায় বলে যান নুসরাত। বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ই এপ্রিল রাতে মারা যায় সে। ২৪শে অক্টোবর ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল নুসরাত হত্যা মামলায় ১৬ আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দেন।

দুই মাসের বিরতি – আবার দেশজুড়ে আলোচনায় বরগুনায় রিফাত শরীফ হত্যা। ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে তা দেশবাসীকে নাড়িয়ে দেয়। জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার হওয়া স্ত্রী মিন্নি এখন জামিনে। আর মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড মারা যান বন্দুকযুদ্ধে। আলোচনায় আসে কিশোর গ্যাং কালচার।

বরগুনার রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা:

২৬শে জুন বরগুনা, স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সামনে কুপিয়ে জখম করা হয় রিফাত শরীফকে। হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। হত্যার প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড ২রা জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।এরপর তদন্ত করে গত ১লা সেপ্টেম্বর বহুল আলোচিত এ মামলায় ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। মামলার প্রধান সাক্ষী রিফাতের স্ত্রী মিন্নি আসামী হয়ে যান।

পরের মাসটি ছিল গুজবে ভরপুর। পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা লাগবে এমন গুজব আর ছেলেধরা সন্দেহে রাজধানীসহ সারা দেশে নিহত হন বেশ কয়েকজন। উত্তর বাড্ডায়- মা রেনু বা নারায়ণগঞ্জের বাকপ্রতিবন্ধী এক বাবার- মৃত্যু চোখে আঙ্গুল দিয়ে অসচেতন সমাজ ব্যবস্থার কথাই মনে করায় বারবার।

গুজব এবং গণপিটুনিতে হত্যা:

পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা লাগবে, শুরু হয় ছেলে ধরার গুজব। ২০শে জুলাই সন্তানের ভর্তির খোঁজ নিতে গিয়ে রাজধানীর উত্তর-পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ছেলেধরা গুজবে গণপিটুনিতে নিহত হন তাসলিমা বেগম রেণু।

আর ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের কয়েক নেতার হাতে বুয়েটের ছাত্র আবরার হত্যার মনে করিয়ে দেয় শিক্ষাঙ্গনে রেগিং বা নষ্ট হতে চলা ছাত্র রাজনীতির কথা। তবে ঘটনার পর প্রশাসনিক নানান তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। আশার কথা হত্যা মামলাটির বিচারকাজও চলছে দ্রুততার সঙ্গে। মামলাটির পরিণতি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অন্যান্য হত্যা মামলার মতো হয়নি।

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা:

ফেইসবুকে একটি স্ট্যাটাস, তারপর ৬ই অক্টোবর..

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। এ ঘটনার প্রতিবাদে বুয়েটে দুই মাসের বেশি একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকে। পরে আবরার হত্যার আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়ার পর বুয়েট কর্তৃপক্ষ ২৬ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করলে ৪ ডিসেম্বর থেকে একাডেমিক কার্যক্রমে যোগ দেয় শিক্ষার্থীরা।

অক্টোবরে সুনামগঞ্জে দিরাই উপজেলায় বাবার হতে খুন হয় ৫ বছরের শিশু তুহিন। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে সন্তান হত্যার চিত্র জানান দেয় কিছু কিছু গ্রামের সমাজ ব্যবস্থার কথাও।

অন্যকে ফাসাতে নিজ সন্তানকে হত্যা:

১৩ই অক্টেবর রাতে সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে শিশু তুহিনকে হত্যা করে গাছের সঙ্গে মরদেহ ঝুলিয়ে রাখা হয়। তুহিনের পেটে দুটি ধারালো ছুরিবিদ্ধ ছিল। তার পুরো শরীর রক্তাক্ত, কান ও লিঙ্গ কাটা অবস্থায় ছিল।বাবা আব্দুল বাছির তুহিনকে কোলে করে ঘরের বাইরে নিয়ে যান। চাচা নাছির উদ্দিন ও চাচাতো ভাই শাহরিয়ার তুহিনকে খুন করেন। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই নিজ সন্তানকে হত্যা করা হয়।

বছরের শেষভাগে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে আলোচনায় আসে ক্যাসিনোকাণ্ড আর ক্ষমতাসীন দলে শুদ্ধি অভিযান। গ্রেপ্তার হন ক্ষমতাসীন অনেকেই। অবৈধ টাকার লেনদেনের তথ্যে হতবাক হয় পুরো দেশ।ক্যাসিনো ও রাজনীতি যার জের এখনো চলমান রাজনীতির মাঠে।

একের পর এক গ্রেপ্তার হন ঢাকা মহানগর যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরি সম্রাট, জিকে শামীম ও খালেদ মাহামুদসহ সরকারদলীয় অনেক নেতা।যুবলীগের চেয়ারম্যান পদ হারান ওমর ফারুক চৌধুরী।

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close