দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম

পাসপোর্ট অফিসে অবৈধ আর্থিক লেনদেন হয়ঃ পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ পাসপোর্ট ইস্যু ও নবায়নে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ তুলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শহিদুল ইসলামসহ অপর একজন সচিবও একই অভিযোগ তুলেছেন। এই অনিয়মে জড়িত পাসপোর্ট অফিসের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে পাসপোর্ট কার্যক্রম স্বচ্ছ করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

গত ১৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সপ্তম বৈঠকে এই অভিযোগ তোলা হয়। ওই বৈঠকের কার্যবিবরণী বুধবার (২৭ নভেম্বর) কমিটির অষ্টম বৈঠকে উপস্থাপন ও অনুমোদন দেওয়া হয়।

প্রবাসী বাংলাদেশিদের সময়মতো পাসপোর্ট নবায়ন না হওয়া এবং ই-পাসপোর্ট কার্যক্রমের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে ওই বৈঠকে পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের ডাকা হয়েছিল।

বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ই-পাসপোর্ট ইস্যুতে দেরি হওয়া, প্রবাসীদের সময়মতো পাসপোর্ট নবায়ন না হওয়া এবং পাসপোর্ট অফিসের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, গত জুলাইয়ে ই-পাসপোর্ট চালুর সিদ্ধান্ত থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। এ সময় ই-পাসপোর্ট নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টিরও অভিযোগ তোলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্পেনের ১৫০ জন প্রবাসী বাংলাদেশির পাসপোর্ট প্রায় ৫ মাস ধরে নবায়ণ না করে ফেলে রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে দূতাবাস থেকে বার বার তাগাদাপত্র দিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি। জরুরিভিত্তিতে সমস্যার সমাধানে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ডিও লেটার দিয়েছেন। একই ধরনের সমস্য প্রায় প্রতিটি মিশন থেকেই পাওয়া যাচ্ছে।

আব্দুল মোমেন বলেন, পয়সা ছাড়া পাসপোর্ট না পাওয়ার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। এ ধরনের অভিযোগ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ব্যাপারে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এসময় ইতালি প্রবাসীদের বয়স কমানোর সংশোধনী সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখার পরামর্শ দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইতালিতে অনেক বাংলাদেশি প্রকৃত বয়স কম দেখিয়ে সেখানকার ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে পাসপোর্ট সংশোধনের জন্য আবেদন করে থাকে। এসব পাসপোর্ট সংশোধন করা না হলে তারা চাকরি হারিয়ে সেখানে অবৈধ হয়ে যাবে। পরে অবৈধ প্রবাসীদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি সরকারের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। তাই বিষয়টি সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখতে সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দেন তিনি।

বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শহিদুল হক বলেন, যথাসময়ে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চালু করতে না পারার জন্য একতরফাভাবে জার্মান কোম্পানিকে দায়ী করা হলে তারা আদালতের আশ্রয় নিতে পারে। এই কার্যক্রমের সঙ্গে পাসপোর্ট অফিসের কোনও কোনও কর্মকর্তা অনিয়মতান্ত্রিকভাবে পদক্ষেপ নিয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

পাসপোর্ট অফিসের বিভিন্ন অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে সিনিয়র সচিব বলেন, একই ব্যক্তির নামে একই বছরে ৩টি মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে, যা ভারতীয় হাইকমিশন থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপন করেছে। পাসপোর্ট অফিসের এ ধরনের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে পাসপোর্ট কার্যক্রম আরও স্বচ্ছ করতে হবে।

ওই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (কনস্যুলার ও দ্বিপাক্ষিক) কামরুল আহসান বলেন, পয়সা ছাড়া পাসপোর্ট ইস্যু না করার অনেক অভিযোগ আছে। এটা বন্ধ করা জরুরি। তিনি পাসপোর্ট নবায়নে পুলিশ ভেরিফিকেশনের দরকার নেই বলেও মন্তব্য করেন।

বৈঠকে প্রবাসীদের পাসপোর্ট নবায়নে দেরির কারণ ব্যাখ্যা করে পাসপোর্ট অধিদফতরের পরিচালক (ই-পাসপোর্ট) বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিরা পাসপোর্ট সংশোধনের ক্ষেত্রে বয়স, নিজেরসহ মা-বাবার নাম পরিবর্তনের জন্য আবেদন করে থাকেন। এই বিষয়গুলো স্বয়ংক্রিয় হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে পরিবর্তন কঠিন হয়ে পড়ে, যার কারণে এই ধরনের পাসপোর্ট সংশোধনে অনাকাঙ্ক্ষিত সময় লেগে যায়।

ওই সভায় কমিটির সভাপতি মুহম্মদ ফারুক খান পাসপোর্ট ইস্যুতে দেরি হলে তার কারণ উল্লেখ করে আবেদনকারীকে এসএমএস বা অন্য কোনও মাধ্যমে জানানোর ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন।

#এমএস

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close