কৃষিশিল্প-বানিজ্য

পাহাড়ে আনারসের বাম্পার ফলন; তবুও চাষিদের ভাগ্যের পরিবর্তন নেই

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ এ বছরও পাহাড়ে আনারসের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে চাহিদা কম, মিলছে না দাম। করোনার কারণে কালো ছায়া নেমে এসেছে আনারসের বাগানে।

বসছে না হাট। নেই ক্রেতা-বিক্রেতার আনাগোনা। একেবারে ক্রেতাশূন্য আনারসের হাট। তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে পানির দরে বিক্রি করতে হচ্ছে আনারস। অথচ গত বছরও ঠিক এ সময় পাহাড়ে উৎপাদিত টসটসে, রসালো ও মিষ্টি আনারস দেশের বিভিন্ন জেলার বাজারে সয়লাব হয়েছিল। কিন্তু এবার ভিন্ন চিত্র।

পাহাড়ে উৎপাদিত আনারস বাগানে রয়ে গেছে। লোক সংকটের কারণে কাটা হচ্ছে না বাগানের আনারস। একই সঙ্গে পরিবহন সংকট তো রয়েছেই। তাই আনারস নিয়ে বিপাকে স্থানীয় কৃষকরা।

রাঙামাটি কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর রাঙামাটিতে ২ হাজার ১৫০ হেক্টর পাহাড়ি ঢালু জমিতে আনারসের আবাদ হয়েছে। যা প্রতি হেক্টর জমিতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৯.২ মেট্রিক টন।

রাঙামাটির পাহাড়ের সব স্থান পাকা আনারসের মৌ মৌ গন্ধে ভরপুর। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শুধু রাঙামাটিতে নয়, আনারসের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে অপর দুই পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে।

কিন্তু ফলন বেশি হলেও লাভের মুখ দেখছে না চাষিরা। সংরক্ষণের অভাবে, সঠিক সময় করা হচ্ছে না বাজারজাত। তাই পচে নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার কষ্টের ফল।

রাঙামাটির কুতুকছড়ি ও সমতাঘাট বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি হাজার আনারস পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে মাত্র দেড় থেকে তিন হাজার টাকায়। স্থানীয়ভাবে পাহাড়ি জেলাগুলোতে কোল্ডস্টোরেজ না থাকা এবং দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থায় সুষ্ঠু বাজারজাতকরণের অভাবে ও লকডাউনের কারণে পাহাড়ে এ বছরও দ্রুত পচনশীল কৃষিপণ্য আনারস স্থানীয় বাজারে পানির দরে বিক্রি হচ্ছে।

চাষিদের পাশাপাশি লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদেরও। এসব আনারস বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ৫ থেকে ১০ টাকায়। আবার অনেক সময় ২ থেকে ৩ টাকায় মিলছে আনারস। স্থানীয় আনারস চাষি ধনকুমার চাকমা জানান, চলতি বছর আনারসের উচ্চ ফলন হয়েছে রাঙামাটিতে। তাই মৌসুমের আগেই বাজারে এসেছে আনারস। কিন্তু তার পরও পাহাড়ের প্রান্তিক চাষিদের ভাগ্য পরিবর্তন হচ্ছে না।

কারণ করোনা দুর্যোগের কারণে আনারসের বাজার মিলছে না। ক্রেতাশূন্য বাজারে আনারস বিক্রি করা সম্ভব নয়। রাঙামাটি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক পবন কুমার চাকমা জানান, গেল বছরের তুলনায় এ বছর ২ হেক্টর জমিতে বেশি আনারস চাষ হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় পাহাড়ি জেলায় ব্যাপক আনারসের চাষ হচ্ছে। ফলনও হচ্ছে লক্ষ্যমাত্রার অধিক। তবে আনারসের প্রচুর ফলন পেয়েও দিশাহারা স্থানীয় চাষিরা। কারণ স্থানীয়ভাবে সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ ও পরিবহনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকায় ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ফলে পার্বত্য এলাকায় উচ্চ ফলনশীল আনারস চাষাবাদের ব্যাপক সম্ভাবনা সত্ত্বেও প্রতি বছর ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন চাষিরা।

/আরএম

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close