প্রধান শিরোনামশিল্প-বানিজ্য

বাণিজ্য সুবিধা সম্প্রসারণে ১৪ কোটি ডলার সহায়তা দেবে এডিবি

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্ক: আন্তঃদেশীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণে সহযোগিতার লক্ষ্যে বাংলাদেশকে ১৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার সহায়তা দেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ও এডিবির সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের আখাউড়া, সোনামসজিদ ও তামাবিল স্থলবন্দরে বাণিজ্য নিরাপত্তা, বাণিজ্যের পরিমাণ, দক্ষতা ও সম্ভাব্যতা উন্নয়নে উল্লিখিত পরিমাণ অর্থ নীতিসহায়ক ঋণ হিসেবে দেবে সংস্থাটি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন ও এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর (বাংলাদেশ) এডিমন গিনটিং এ-সংক্রান্ত চুক্তিতে ভার্চুয়ালি সই করেন।

রফতানি খাতে গুণগত মানোন্নয়নের মাধ্যমে বৈচিত্র্য ও প্রতিযোগিতা সক্ষমতা অর্জনে ক্রমাগতই বাণিজ্যিক সুবিধা সংস্কার করে আসছে বাংলাদেশ। এ উদ্দেশ্য অর্জনে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহায়তা চুক্তির পাশাপাশি বিভিন্ন সীমান্ত সংস্থা ও বেসরকারি অংশীদারদের সঙ্গে সহায়তামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমেও বাণিজ্য সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।

চুক্তির আওতায় সাউথ এশিয়া সাবরিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন ইন্টিগ্রেটেড ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন (এসএএসইসি) সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের (এসডিপি) মাধ্যমে আখাউড়া, সোনামসজিদ ও তামাবিল সীমান্ত ক্রসিং পয়েন্টে বাণিজ্য নীতিমালা সংস্কার ও আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য সুবিধা উন্নয়ন করবে। এর মাধ্যমে এসএএসইসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যিক কার্যক্রম সহজীকরণের মাধ্যমে সংযোগ বাড়ানো এবং বাংলাদেশকে আঞ্চলিক হাবে পরিণত করতে সহযোগিতা করবে। এসডিপির মাধ্যমে আঞ্চলিক বাজারে বাংলাদেশের রফতানি গন্তব্যকে বহুমুখী ও রফতানি খাতে তৈরি পোশাকের পাশাপাশি আরো বৈচিত্র্য আনয়নে সহায়তা করবে।

এডিবির এ সহায়তামূলক প্যাকেজের আওতায় ৯ কোটি ডলার বা বাংলাদেশী মুদ্রায় ৮৩৬ কোটি ৯৪ লাখ ৮২ হাজার টাকা নীতিসহায়ক ঋণ দেয়া হবে। এ ঋণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণে কাস্টমসের নীতি কাঠামো সংস্কার ও কার্গো ক্লিয়ারেন্স পদ্ধতি উন্নয়নে ব্যয় করা হবে। পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের শক্তিশালীকরণে এ অর্থ ব্যয় করা হবে।

এছাড়া নীতি সংস্কারের পরিপূরক হিসেবে ৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার বা বাংলাদেশী মুদ্রায় ৪৯২ কোটি ৮৬ লাখ ৯৫ হাজার টাকা প্রকল্প ঋণ দেবে এডিবি। এ ঋণের অর্থ ব্যয় করা হবে আখাউড়া, সোনামসজিদ ও তামাবিল স্থলবন্দরে এনবিআর ও বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের (বিএলপিএ) সমন্বিত কাস্টমস স্টেশন ও অবকাঠামো নির্মাণে। এসব স্থলবন্দরে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স ও কার্গো ট্রান্সশিপমেন্ট কার্যক্রম পরিচালনায় প্রয়োজনীয় সুবিধা ও যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হবে।

চুক্তির আওতায় প্রযুক্তিগত সহায়তামূলক বিশেষ তহবিল থেকে ১৫ লাখ ডলার বা বাংলাদেশী মুদ্রায় ১৩ কোটি ৯৪ লাখ ৯১ হাজার টাকা প্রযুক্তিগত সহায়তা অনুদান দেয়া হবে। এ অর্থ কাস্টমসের নীতি কাঠামো আধুনিকীকরণ ও সীমান্ত সংস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক স্থাপনে ব্যয় করা হবে। পাশাপাশি স্থলবন্দরগুলোতে কাস্টমস কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এনবিআরের সক্ষমতা বাড়ানো এবং স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ও এনবিআরে প্রকল্প বাস্তবায়ন সক্ষমতা তৈরি করার জন্যও এ অর্থ ব্যয় করা হবে।

১৯৭৩ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত বাংলাদেশে ঋণ, অনুদান ও সহঅর্থায়নের আওতায় ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার দিয়েছে এডিবি। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশে এডিবির ১ হাজার ১০০ কোটি ডলার অর্থায়নে চলমান রয়েছে ৫০টি প্রকল্প।

এ সম্পর্কে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর (বাংলাদেশ) এডিমন গিনটিং বলেন, বাংলাদেশে নীতি ও কৌশলের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে শিল্পায়ন ও বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি এবং উপআঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে রফতানি বৈচিত্র্য ও প্রতিযোগিতা বাড়াতে সহায়তা করছে এডিবি। এডিবির সহায়তার ফলে আখাউড়া, সোনামসজিদ ও তামাবিল স্থলবন্দরে আমদানি ও রফতানি কার্গোগুলোর পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করবে। ২০২৭ সালের মধ্যে বন্দরগুলোতে কার্গো পরিবহনের পরিমাণ বাড়বে অন্তত ৫০ শতাংশ। একই সময়ে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স ও কার্গো ট্রান্সশিপমেন্টের সময় কমে আসবে অন্তত ৫০ শতাংশ। এ সময়ে তিনটি বন্দরেই ই-পেমেন্ট ব্যবস্থা চালু করা হবে। বার্ষিক কার্গো পরিবহন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ৫ লাখ ২০ হাজার টন। পাশাপাশি কাস্টমস ল্যাবরেটরি, কাস্টমস ওয়্যারহাউজ ও কাস্টমসের আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ একাডেমি স্থাপন করা হবে।
/একে

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close