দেশজুড়ে

যশোরে কোটি টাকার বাড়ি,নিউজ না করতে অনুরোধ আরডিসি নাজিমের!

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ কুড়িগ্রামের আলোচিত আরডিসি নাজিম উদ্দীন চাকরিতে ঢোকার ৬ বছরের মধ্যে শুরু করেছেন চারতলা বিশিষ্ট আলীশান বাড়ি নির্মাণের কাজ। তিন ইউনিটের এই সুবিশাল বিল্ডিংয়ের প্রতিটি তলা ২৯০০ স্কয়ারফিটের। বাড়িটি নির্মাণে ইতিমধ্যে ব্যয় হয়েছে পঞ্চাশ লক্ষাধিক টাকা। নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে এক কোটি ২০ লাখ টাকা।

বাড়িটি যৌথ মালিকানার দাবি করা হলেও নাজিম ও তার স্ত্রীর বক্তব্যে রয়েছে গোঁজামিলের গন্ধ। এলাকাবাসীর ধারণা অবৈধ আয় প্রকাশ্যে না আনতেই ফাঁদা হয়েছে যৌথমালিকানার গল্প।মধ্যরাতে বাংলা ট্রিবিউনের সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে অমানুষিক নির্যাতনের নেতৃত্বদানকারী কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আরডিসি (সিনিয়র সহকারী কমিশনার-রাজস্ব) নাজিম উদ্দীনের বাড়ি যশোরের মণিরামপুরে।

সোমবার (১৬ মার্চ) সকালে এলাকায় গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শৈশব থেকেই তিনি নানাবাড়ি মণিরামপুর উপজেলার খেদাপাড়া ইউনিয়নের কাশিপুর কাঁঠালতলা গ্রামে বসবাস করেন। বাবা নেছার আলী দিনমজুর ও মা মাজেদা বেগম গৃহপরিচারিকার কাজ করেই লেখাপড়া শিখিয়েছেন নাজিমকে। তাদের বিষয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতে চাননি।

তবে কাশীপুর এলাকার বাসিন্দা প্রাণিসম্পদ বিভাগের সাবেক কর্মী মুক্তিযোদ্ধা হাসানুল বারী ও তার স্ত্রী জানান, নেছার আলীর একসময় টালির ভাটায় দিনমজুর দিতেন। দুই সন্তানের মধ্যে নাজিম বড়। অপর সন্তানটি মেয়ে, তিনি স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় বসবাস করেন। তার স্বামী সচিবালয়ে চাকরি করেন।তিনি আরো বলেন, নাজিমদের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। তার বাবা-মা খুব কষ্ট করে তাকে পড়ালেখা শিখিয়েছে।

৩৩তম বিসিএস ক্যাডারে ২০১৪ সালে চাকরিতে জয়েন করেন নাজিম উদ্দিন। এরআগে তিনি এক্সিম ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন বছর দেড়েক। প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি হওয়ার মাসতিনেক পর নাজিমের বিয়ে হয় ভগবানপাড়ার বাসিন্দা সাবেক প্রধানশিক্ষক আব্দুর রাজ্জাকের চতুর্থ মেয়ে সাবিনা সুলতানার সঙ্গে। ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে চাকরি পাবার পর দিনবদল শুরু হয় নাজিমের। তিনবছর আগে মামা বাড়ির আড়াই শতক জমির উপর নির্মাণ করেন একতলা বাড়ি। এ বাড়িতেই তার স্ত্রী, সন্তান ও মা থাকেন। সুসজ্জিত এ সিসিটিভিযুক্ত। চারটি ক্যামেরা রয়েছে তাতে।

এছাড়া মণিরামপুর পৌরসভার ভগবানপাড়ায় ৮ শতক জমিতে নির্মাণ করা হচ্ছে একটি চারতলা বিল্ডিং। তিন ইউনিটের এই সুবিশাল বিল্ডিংয়ের প্রতিটি তলা ২৯০০ স্কয়ারফিটের।এ বাড়ির বিষয়ে জানতে চাইলে নাজিমের স্ত্রী সাবিনা সুলতানা বলেন, ভগবানপাড়ার ওই জমিটি আমার বাবা আমাকে ও আমার একবোনকে দিয়েছেন। ওইবোনের স্বামী আমেরিকাপ্রবাসী। তিনি ও আমরা বাড়িটি যৌথভাবে করছি। নির্মাণকাজ এখনও শেষ হতে অনেক দেরি।

অবশ্য আরডিসি নাজিম উদ্দিন বলেন, জমিটি আমার আমেরিকা প্রবাসী ভায়রাভাইয়ের (শ্যালিকার স্বামী) টাকায় কেনা। এই বাড়ির মালিকানা তার ৭০ শতাংশ আর আমার ৩০ শতাংশ। বাড়ির নির্মাণ কাজ শেষ করতে সোনালী ব্যাংকে ঋণের জন্যে আবেদন করেছেন বলেও জানান।তিনি আরো বলেন, আমি আরিফ ভাইকে মারিনি। আমাদের যে শাস্তি হওয়ার তা হয়েছে। আমাদের যাদের নাম এসেছে ওই ঘটনায়, তাদের সকলকে ওএসডি করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আর কোনও সংবাদ না প্রকাশ করার জন্যে অনুরোধ করেন তিনি।

এদিকে, নির্মাণাধীন ওই আলিশান বিল্ডিংয়ের নির্মাণকাজের সাব-ঠিকাদার একই এলাকার আতিয়ার রহমান বলেন, ২০১৭ বা ১৮ সালে একই উপজেলার হোগলাডাঙ্গা গ্রামের মোখলেসের কাছ থেকে এই জমিটি কেনা হয় সাড়ে ১৪ লাখ টাকা দিয়ে। চারতলা এই বিল্ডিংটির কাজ শুরু হয় ১১ মাস আগে। ছাদ পর্যন্ত হয়ে গেছে; এখন গাঁথুনির কাজ চলছে। এ পর্যন্ত পঞ্চাশ লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হয়েছে। কাজ শেষ করতে এক কোটি ২০ লাখ টাকার মতো খরচ হবে। বাড়িটি নাজিম সাহেবের শ্বশুর প্রাইমারি স্কুলের সাবেক প্রধানশিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক তদারকি করেন।

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার কয়েকজন জানান, নাজিম সরকারি কর্মকর্তা। আবারো ক্ষমতাশালী হয়ে কর্মস্থলে ফিরে আসবেন তিনি। ফলে তার বিরুদ্ধে মুখ খুললে বিপদ অনিবার্য।তারা আরো বলেন, ম্যাজিস্ট্রেটের চাকরি হবার পর তার বিত্তবৈভব বেড়েছে। স্ত্রী ও মায়ের জন্য যে বাড়ি করেছে তার ভিতরে গেলে বোঝা যায় তারা কত অর্থশালী। এছাড়া পৌর এলাকায় যে বাড়ি করছে তা অবৈধ উপার্জন দিয়েই। মূলত অবৈধ উপার্জন যাতে সামনে না আসে সেজন্য বাড়িটি যৌথমালিকানার বলে প্রচার চালানো হয়। অবশ্য তাদের পরিবারের সদস্যদের একেক জনের বক্তব্য একেক রকম। যাতে সবাই বুঝতে পারে বাড়ির মালিককে।

/এন এইচ

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close