দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম

সাগরপাড়ে ২০০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার, সেবা দিবে বিনামূল্যে

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ পর্যটন শহর কক্সবাজারে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে (কোভিড ১৯) করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। এরমধ্যে শুধুমাত্র কক্সবাজার সদর উপজেলাতেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হাজার ছুঁই ছুঁই। এমন পরিস্থিতিতে আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে সংশ্লিষ্টরা।

জেলা প্রশাসন বলছে, আক্রান্তের হার বিবেচনা করেই চিকিৎসা সেবার সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। এসব বিষয় বিবেচনা করে আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা দিতে সাগরপাড়ের সী প্রিন্সেস নামের একটি হোটেলে ২০০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার করা হচ্ছে। শুক্রবার (১৯ জুন) এটির পরীক্ষামূলক উদ্বোধন করা হবে। আর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে ১ সপ্তাহ পর।

জানা যায়, জেলা প্রশাসন ও জেলা সিভিল সার্জন অফিস যৌথভাবে এটি পরিচালনা করবে। আর এই সেন্টারের ব্যয়ভার বহন করবে জাতিসংঘসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আশরাফুল আফসার জানান, কক্সবাজারে যেহেতু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে তাই বিষয়টি মাথায় রেখে মূলত এই আইসোলেশন সেন্টারটি করা হচ্ছে। শুক্রবার থেকে সেখানে রোগীরা চিকিৎসা সেবা নিতে পারবেন।

তিনি আরও বলেন, ‘এটি সমুদ্র সৈকতের একদম নিকটে। পরিবেশগত দিক থেকে আইসোলেশন সেন্টারের জন্য খুবই উপযোগী। কক্সবাজার সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টের এ হোটেলটিতে ২০০টি কক্ষ রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৫০ শয্যার আইসোলেসন সেন্টার চালু করা হবে। পর্যায়ক্রমে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হবে। এই আইসোলেশন সেন্টারের কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য সচ্ছল রোগীদের কাছ থেকে একটা টোকেন মানি নেওয়া হবে। যা ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা হতে পারে। এ আয় এই সেন্টারের ব্যয় নির্বাহে ব্যবহার করা হবে। তবে অসচ্ছল, গরিব রোগীরা সব সুবিধা পাবেন বিনামূল্যে।’

জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরে শরণার্থীদের মানবিক সেবায় নিয়োজিত জাতিসংঘের একাধিক দাতা সংস্থাসহ দেশি-বিদেশি সংস্থার সহযোগিতায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ২০০ শয্যার এই আইসোলেশন সেন্টার করছে। করোনা রোগীরা বিনা খরচে হোটেলে থাকার সুযোগ পাবেন। রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মী যোগান দেবে জেলা সিভিল সার্জন অফিস। রোগীদের ওষুধ, খাবার ও নিয়োজিতদের বেতন–ভাতাসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় বহন করবে বিভিন্ন সংস্থা। জেলা প্রশাসন ও সিভিল সার্জন অফিস সমন্বিতভাবে আইসোলেশন সেন্টারের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

সিভিল সার্জন মাহবুবুর রহমান বলেন, তুলনামূলকভাবে যেসব করোনা রোগীর তেমন কোনো উপসর্গ নেই, মোটামুটি সুস্থ, কিন্তু নিজের ঘরে থাকার সুব্যবস্থা নেই মূলত তাদের এই আইসোলেশন সেন্টারে রাখা হবে। জেলায় কোভিড-১৯ রোগীদের শয্যা সংকট

এদিকে জেলায় করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় দুই হাজার ছুঁই ছুঁই। এ পরিস্থিতিতে বর্তমানে জেলার রামু ও চকরিয়া উপজেলায় ৫০ শয্যার পৃথক দুটি (মোট ১০০ শয্যা) আইসোলেশন সেন্টার রয়েছে। এছাড়াও উখিয়ায় বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে ১৪০ শয্যার ট্রিটমেন্ট সেন্টার। এছাড়াও আটটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কিছু কিছু রোগী চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। যা আক্রান্ত রোগীর তুলনায় অপ্রতুল।

বিষয়টি স্বীকার করে কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে, সে তুলনায় আইসোলেশন শয্যার সংকট আছে। বর্তমানে সবমিলিয়ে ৩২০ শয্যা প্রস্তুত আছে। আরও পাঁচ শতাধিক রোগীকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানান, সংকট নিরসনে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। রামু ও চকরিয়ায় ৫০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টারে অতিরিক্ত আরও ২৫ বেড করে ৫০ শয্যা বাড়ানো হচ্ছে। ২৫০ শয্যার কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নির্মাণাধীন ১০ শয্যার আইসিইউ ইউনিটের পাশাপাশি সাধারণ রোগীদের সুরক্ষায় একই ভবনে ৫০ বেডের পৃথক আইসোলেশন ইউনিট তৈরির কাজ চলছে। এর বাইরে কক্সবাজার স্টেডিয়ামে ২০০ শয্যার আরেকটি ফিল্ড হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। চকরিয়া মেমোরিয়াল খ্রিস্টান হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার জন্য ১৫ শয্যার পৃথক আইসোলেশন সেন্টারের প্রস্তুতিও প্রায় শেষ পর্যায়ে।

এ পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৮০০। এর মধ্যে ৪০ জন রোহিঙ্গা। জেলায় এ পর্যন্ত মারা গেছেন তিন রোহিঙ্গাসহ ২৮ জন। সুস্থ হয়েছেন ৪৪৯ জন।

/এন এইচ

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close