দেশজুড়েপ্রধান শিরোনাম

সাবধান! ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে জাল টাকার কারবারীরা তৎপর

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে মাঠে নেমেছে নিষিদ্ধ জাল টাকার কারবারীরা। ওরা প্রচন্ড র্ধূত, চতুর কৌশলে নিরীহ লোজনকে ধোঁকা দেয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ প্রতারক চক্রের টার্গেট হয় গরু ব্যবসায়ীরা। তারা দেশজুড়ে কোটি কোটি জাল টাকা ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করছে মুসলিমদের বড় এ ধর্মীয় উৎসবকে সামনে রেখে। সম্প্রতি এমনই কয়েকটি চক্রের সদস্যরা ধরা পড়েছে র‌্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে- জাল টাকার কারবারীরা এতই ধূর্ত যে, সুন্দরী তরুণীদের ব্যবহার করতো জাল টাকা ছড়িয়ে দিতে। এদের মধ্যে কেউ প্রস্তুতকারী, কেউ বহনকারী আবার কেউ কেউ বিক্রেতা। এসব নারীদের অনেকেই পরিবারের কারো না কারো হাত ধরে জড়িয়ে পড়েছে এই অবৈধ কাজে।

আবার অনেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার পর বের হয়ে পুনরায় জড়িয়ে পড়ছে এ অপরাধকর্মে। নারীদের মধ্যে অনেকে জাল টাকা তৈরিতে বিশেষ দক্ষ্য। অনেক নারী আবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা পাচারকারী দলেরও সদস্য। শুধু রাজধানীতেই এ চক্রের সদস্যদের সংখ্যা নূন্যতম ৫০ জন।

নারীদের পক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে এ ধরনের নিষিদ্ধ ব্যবসা করা সহজ। কারণ সহজেই তাদের দেহ তল্লাশি করা যায় না। জাল টাকার কারবারী নারীরা সাধারণত ভাসমান অবস্থায় থাকেন। এক ঠিকানায় তারা বেশিদিন থাকেন না।

জাল টাকার বিষয়টি প্রথম আলোচনায় আসে ২০১১ সালে। তখন রাজধানীর হযরত শাহজালার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শামি নাজ নামে এক পাকিস্তানি নাগরিক আটক হয়। বিপুল পরিমাণে ভারতীয় জাল রুপিসহ তাকে আট করা হয়। তখন থেকেই জানা যায়, তার সঙ্গে রয়েছে বাংলাদেশের জাল টাকার কারবারীদের যোগাযোগ।

রাজধানীর মিরপুর ও মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পের উর্দু ভাষাভাষীর বেশ কয়েকজন সুন্দরী তরুণী রয়েছে এসব সিন্ডিকেটে। তাদের মধ্যে শাবানা ও জাল টাকার আরেক বড় কারবারী দাঁত ভাঙা মান্নানের স্ত্রী রোজিনা আক্তারের মতো সুন্দরী এক্সপার্ট। মান্নানের মৃত্যুর পর স্বামীর ব্যবসার হাল ধরেন তিনি। জাল টাকার কারবারীদের কাছে দক্ষ কারিগর হিসেবে সুনাম আছে শান্তা ওরফে শাবানার। এছাড়া যাত্রাবাড়ি, নারায়ণগঞ্জ, আব্দুল্লাহপুর ও কেরানীগঞ্জে রয়েছে জাল টাকা তৈরির বেশ কিছু গ্রুপ।

গত বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের সোনাগাঁওয়ের বাঘরী উত্তরপাড়া থেকে বাবু নামে এক ব্যক্তিকে আটক করেছে র‌্যাব। র‌্যাব-১০ এর সিপিসি (ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানি)-১ এর স্কোয়াড কমান্ডার এএসপি মো. শহীদুল হক মুন্সীর নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে বাবু নামের এক ব্যক্তিকে ১৪ লাখ ৪২ হাজার টাকা মূল্যের জাল নোটসহ গ্রেফতার করা হয়েছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, বাবু দীর্ঘদিন ধরে জালটাকা কেনা-বেচা চক্রের সঙ্গে জড়িত। কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে এসব জাল টাকা বিক্রির পরিকল্পনা করেছিলো সে।

এর আগে গত ১৫ জুন প্রতারক শিরোমনী রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদকে গ্রেফতারের পর তার উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের বাড়ি থেকে ১ লাখ ৪৬ হাজার টাকা মূল্যের জাল নোট উদ্ধার হয়েছে। র‌্যাবের কাছে স্বীকার করেছে- সে ঋণের টাকা শোধ করতো জাল টাকা দিয়ে।

অপরদিকে, ২৮ জুন রাত ১২টা থেকে পরদিন দুপুর পর্যন্ত পৃথক অভিযানে রাজধানীর মিরপুর ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে ২ নারীসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-২। মিরপুররে ১২/ই ব্লকের ৬২ নম্বর ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার জি ব্লকের ১৬১ নম্বর বাসায় এই অভিযান চালানো হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো- রমিজা বেগম, খাদেজা বেগম, সেলিম, মনির, মঈন। তাদের কাছ থেকে ৪ কোটি টাকা মূল্যের ১ হাজার টাকার জাল নোট ও ৪০ লাখ টাকা মূল্যের ৫০০ ও ২ হাজার ভারতীয় জাল রুপি উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকার জাল নোট বানানোর কাগজ, কালি ও জলছাপ দেয়ার সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

জিজ্ঞাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, বিশেষ করে ১০০ টাকার নোটকে সিদ্ধ করে বিশেষ রং দিয়ে ৫০০ টাকার ছাপ দিয়ে কাগজ ও প্রিন্টার ব্যবহার করে তৈরি করা হয় নোট। আর এক হাজার টাকার জাল নোটগুলো দেখে আসল না নকল চেনা প্রায় অসম্ভব। প্রতি বছর ঈদুল আজহা উপলক্ষে সারাদেশের পশুর হাটে জাল টাকার ব্যবসা করে তারা। এবারো বিপুল পরিমাণ জাল টাকা বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা ছিলো তাদের। প্রতি লাখ জাল টাকা ৮ থেকে ১০ হাজার টাকায় খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে তারা।

অপরদিকে, গত ৩ জুলাই বার্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর যশোর ব্যাটালিয়ন (৪৯ বিজিবি) ১টি প্রাইভেট কার থেকে ১ লাখ ১৫ হাজার মার্কিন ডলারসহ ৩ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। তারা হলো-শাহ আলম, মাসুদ রানা ও জাকির হোসেন।

৪৯ বিজিবি এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সেলিম রেজা জানান, ঈদকে সামনে রেখে সীমান্তে কঠোর নজরদারি ও গোয়েন্দা কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে। এরইমধ্যে যশোর বেনাপোল রোড থেকে তাদের এসব মার্কিন ডলারসহ গ্রেফতার করা হয়।

এর আগে গত ২০ মে র‌্যাব-৪ এর সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম সজলের নেতৃত্বে ক্যান্টনমেন্টর মাটিকাটা এলাকায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ৯৯৫ ইয়াবা, ৮৪ গ্রাম হেরোইন ও জাল টাকাসহ মাদক সম্রাজ্ঞী স্বপ্না আক্তারকে গ্রেফতার করা হয়। র্শীষ সন্ত্রাসী কালা আব্বাসের সঙ্গে স্বপ্না আক্তারের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে বলে জানান এএসপি সজল।

এসব বিষয়ে কথা হয় এলিট ফোর্স র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে। একান্ত আলাপনে র‌্যাব প্রধান ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন- ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে এসব অপরাধীরা তৎপর হয়। আমরা সজাগ রয়েছি। প্রযুক্তির সহায়তা, গোয়েন্দা নজরদারিসহ অন্যান্য কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে। এরইমধ্যে কিছু অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। অপরাধ করে কেউ পার পাবে না।

/এন এইচ

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close