বিশেষ প্রতিবেদন

সামনে থাকলেও দেখা যায় না ছদ্মবেশী এই পাখিকে!

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ নিশাচর এক পাখি। গাছের গায়ে এই পাখি বসে থাকলে কেউই তাকে চিনতে পারবে না। কারণ তার গায়ের রং ও লুকানোর কৌশল। এই পাখির নাম পোটো। এর অসাধারণ ছদ্মবেশ ধারণের কৌশল সত্যিই বিষ্মকর বটে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা এই পাখি গাছের কোনো ডালে ঘাপটি মেরে বসে থাকতে পারে। আত্মগোপনের কৌশলই পোটো পাখির এক অনন্য বৈশিষ্ট্য।অনেকটা চড়ুই জাতীয় পাখির মতো দেখতে এবং ফ্রগমাউথ গোত্রের কাছাকাছি। তাদের ভুতুড়ে ডাকের কারণে ‘পোর-মি-ওয়ানস’ নামেও পরিচিত। এই পাখিটির সাতটি প্রজাতি আছে। নিকটিবিয়াস বা পোটো প্রজাতি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের পাখি। পোটো পাখি নিশাচর পোকামাড়ভোজী। তবে এদের মুখের চারপাশে অন্যান্য নিশাচরদের মত লোম নেই। তারা শ্রাইক কিংবা ফ্লাইক্যাচার পাখিদের মতো উপর থেকে শিকার ধরে।

দিনের বেলায় পাখিটি গাছের ডালে ছদ্মবেশ ধারণ করে সোজা হয়ে এমনভাবে থাকে দেখলে মনে হবে গাছেরই অংশ। সাধারণত তারা গাছের মরা ডালে বসে। অদ্ভুত বিষয় হলো পোটো ডিম পাড়ে সারাসরি গাছের সোজা মরা ডালের মাথায়। তবে সেখান থেকে ডিম কিন্তু পড়ে যায় না। পোটো নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা অন্যতম এক পাখি। তবে অতীতে তাদের বিচরণ আরো অনেক বেশি বিস্তৃত ছিল। ফ্রান্স এবং জার্মানিতে পোটো পাখির প্রাগৈতিহাসিক অলিগোসিন এবং ইওসিন যুগের জীবাস্মের সন্ধান মিলেছে।

এই বৈচিত্র্যময় পাখির বসবাস বর্তমানে আর্জেন্টিনা থেকে মেক্সিকোসহ আমাজনের গহীন জঙ্গলে। আমাজনে এর পাঁচটি প্রজাতির দেখা মেলে। শুধু চিলি বাদে মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকার সবগুলো দেশেই তাদের দেখা মেলে। জ্যামাইকা, হিস্পানিয়োলা এবং টোবাগো এ তিনটি ক্যারিবিয়ান দ্বীপেও পাখিটির বিচরণ আছে। পোটো পাখি সাধারণত এক জায়গায় স্থায়ীভাবেই থাকতেই পছন্দ করে এবং কদাচিৎ পাখিটি যাযাবর জীবন যাপন করে।

পাখিটির বেশিভাগ প্রজাতি আর্দ্র বনে থাকে। কয়েকটি প্রজাতি অবশ্য শুষ্ক বনেও দেখা যায়। পোটো পাখি পুরোপুরি নিশাচর। সাধারণত এদের দিনে উড়তে দেখা যায় না। দিনে তারা গাছের শুকনো ডালে চোখের পাতা অর্ধ বন্ধ অবস্থায় কাটায়। পোটো সম্ভাব্য কোনো বিপদ শনাক্ত করতে পারলে নিজেকে ডালের সঙ্গে মিশিয়ে নিশ্চল হয়ে যায়। তখন অন্যের দ্বারা তার অবস্থান শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব। ইংরেজ প্রাণী বিজ্ঞানী হিউ কট পোটোকে ‘বিস্ময়কর পাখি’ হিসেবে বর্ণানা করেছেন।পোটো পাখি সন্ধ্যা এবং রাতে উড়ন্ত পোকামাকড় খায়। তাদের আশপাশ দিয়ে উড়ে যাওয়া পোকামাকড়কে ক্ষিপ্র গতিতে উড়ে গিয়ে শিকার করে আবার তারা নিজের জায়গায় ফিরে আসে। তারা মাটিতে পড়ে যাওয়া শিকার তুলে আনার কোনো চেষ্টাই করে না। বেশিরভাগ সময় পাখিটি পতঙ্গ, ঘাসফড়িং এবং উইপোকা খেয়ে থাকে। তবে উত্তর অঞ্চলের একটি পোটোর পেটে একটি ছোট পাখি পাওয়া গিয়েছিল। এরা শিকার ধরে সরাসরি গিলে নেয়।

পোটো পাখি একটি সঙ্গীর সঙ্গেই জীবন কাটায়। ডিম ফুটানো থেকে শুরু করে বাচ্চা বড় করা বাবা ও মা উভয় পাখিই ভাগ করে নেয়। তারা কোনো বাসা বাঁধে না। তার পরিবর্তে ডালের ফাঁকে অথবা ভাঙা শুকনা ডালের মাথায় একটি মাত্র ডিম পাড়ে।এদের ডিম বেগুনি-বাদামি দাগযুক্ত। বেশিভাগ সময় বাবা পাখি দিনে ডিম তা দেয় এবং মা পাখি তা দেয় রাতে। ছদ্মবেশ ধারণ করেই পোটোরা বাচ্চা বড় করে। নিজের বাসা বাঁধা নয় বরং শত্রুর হাত থেকে বাঁচার কৌশল নিয়ে ভাবতে থাকে তারা।বাচ্চাটিও বাবা মার মতো লুকানোর কায়দা শিখে যায়। ছত্রাকের মতো গাছের ডালে মিশে যায় বিপদ অনুধাবন করতে পারলে। পোটো পাখি শত্রু মোকাবিলায় বিশেষ কৌশল অবলম্বন করে। নীড়ের কাছে শিকারির অবস্থান বুঝলে তারা আত্মরক্ষার জন্য স্থির থাকে এবং ছদ্মবেশ ধারণ করে গাছের সঙ্গে মিশে থাকে।

এদের গায়ের রং ধূসর, কালো এবং বাদামি রঙের মিশ্রণে হয়ে থাকে। এজন্য গাছের সঙ্গে নিজের রং সহজেই মিশিয়ে ছদ্মবেশ নিতে পারে। দূরবর্তী কোথাও শিকারি থাকলে খুব ধীরে ধীরে নিরাপদে চলে যায়। নিশাচর প্রাণী সাধারণত দেখে শিকার ধরে না। এজন্য পোটো পাখি রাতে আত্মরক্ষার জন্য ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে।

/এন এইচ

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close