প্রধান শিরোনামসাভারস্থানীয় সংবাদ

সাভারে গণহত্যার প্রাথমিক স্বীকৃতি

নিজস্ব প্রতিবেদক:  স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর সাভারের আশুলিয়ার ইছরকান্দি গ্রামে গণহত্যার স্বীকৃতি মিলছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ড. এনামুর রহমান বুধবার সাভার  উপজেলার আশুলিয়ার ইছরকান্দির গণহত্যাস্থানে দুটি নাম ফলক লাগানোর মধ্য দিয়ে স্বীকৃতির প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে।

স্বাধীনতার ৪৮ বছর পেরিয়ে গেলেও আশুলিয়ার ইয়াপুর ইউনিয়নের ইছরকান্দি গ্রামে পাকবাহিনীর ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ অজানা ছিল। বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদের ভিত্তিতে তা উঠে আসে।

ইতিমধ্যে হত্যাযজ্ঞের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসির মামুন। আর মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হকও যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন।

স্থানীয় সংসদ সদস্য দুই দফায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। প্রথম দফায় এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ এবং সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে বাস্তবতা জানার চেষ্টা করেছেন। দ্বিতীয় দফায় ড. এনামুর রহমান ইছরকান্দিতে বলাই সিধবার বাড়ির সামনে এবং ইছরকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে  দুটি ফলক লাগান। নাম ফলকে ১৯৭১ সালে পাকবাহিনীর হাতে নিহতদের নাম পরিচয় এবং সেদিনের সংক্ষিপ্ত ঘটনার বর্ণনা রয়েছে। অস্থায়ী নাম ফলক হলেও এটি ইতিহাসের প্রাথমিক স্বীকৃতি বলে প্রতিমন্ত্রী ড. এনাম জানিয়েছেন।

তিনি জানান, ইছরকান্দির গণহত্যা ইতিহাসে স্থায়ীভাবে স্বীকৃতি দিতে ইতিমধ্যে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের সাথে সমন্বয় করে যা যা করার তাই করা হবে।

তুরাগ নদীর তীড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ইছরকান্দি গ্রামের একমাত্র অবলম্বন খেয়াপাড়াপাড়। ফলে ১৯৭১ সালের ২০ জুন (বাংলায় ৫ জৈষ্ঠ্য ১৩৭৮ সাল) পাক বাহিনী এই গ্রামে হত্যাযজ্ঞ চালায়। ইছরকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ে বিভিন্ন গ্রাম থেকে আত্মগোপনে থাকা বা আশ্রয় নেয়া প্রায় অর্ধশত লোককে লাইন করে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। মাগন মিয়াকে এই গ্রামে সবার আগে হত্যা করা হয়।

নিহত মাগন মিয়ার ভাই মালেক জানান, সকাল বেলা পাকবাহিনীর ৪০/৫০ সদস্য নদী পার হয়ে তাদের বাড়িতে হানা দেয়। এরপর তার ভাইকে হত্যা করে। তিনি জানান, লাশগুলো হত্যার পর কিছু নদীতে ফেলে দেয়া হয় এবং পাঁচটি গণকবরে প্রায় ৪০ জনকে চাপা দেয়া হয়।

বলাই সিধবা নামে একজনের পরিবারের ৯ জনকে সেদিন পাক বাহিনী হত্যা করে। যারা হচ্ছেন- দ্রুপদি সিধবা,সচিন্দ্র চন্দ্র সিধবা, যোগিন্দ্র চন্দ্র সিধবা, প্রফুল্ল চন্দ্র সিধবা, মায়াদাসি সিধবা, ভাই মন্টু চন্দ্র সিধবা এবং লক্ষণ চন্দ্র সিধবার নাম জানা গেলেও বাকি দুজনের নাম জানা যায়নি।

পাচু শিকদারের মা কমলা ও বোন যমুনা পাকবাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার হন। এর বাইরে তার আরেক বোনকে গুলি করা হয়।

পাক বাহিনীর হাতে প্রাণ হারানো মন্টু বিশ্বাস পরিবারের স্বজনদের মধ্যে নিতাই শিধা, দয়াল শিধা, হরিনাথ শিধা ও মনিন্দ্র শিধা এবং ছেলে সুধীর সিধা ও সুধাংশু সিধার নাম জানা গেছে। এর বাইরে আরেকজন মারা গেলেও তার নাম জানা যায়নি।

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close