করোনাসাভারস্থানীয় সংবাদ

সাভারের পরিবহন খাত; ঘুড়ছে না চাকা, জ্বলছে না চুলা

নিজস্ব প্রতিবেদক: যানের চাকা ঘুরলে যাদের জীবনের চাকাও ঘোরে করোনা ঠেকাতে সরকারি ছুটির মধ্যে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় তাদের জীবনে নেমে এসেছে অচলাবস্থা। করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধে দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি চলছে। বন্ধ রয়েছে সবরকমের গণপরিবহন।

সারা দেশের মত এতে বিপাকে পড়েছেন সাভার আশুলিয়ার বাস কাউন্টার মালিক ও পরিবহন শ্রমিকেরা। ‘দিন এনে দিন খাওয়া’ এই মানুষদের উনুনে আগুন জ্বালাতেও বেগ পেতে হচ্ছে। সরকার, পরিবহণ মালিক, শ্রমিক নেতাসহ কারো থেকে কোনো ধরণের সহযোগিতা মিলছে না বলেও অভিযোগ করছেন তারা। যদিও পরিবহন শ্রমিকদের জন্য তাদের ভাবনা রয়েছে বলে দাবি করছেন এই সেক্টরের নেতারা।

এদিকে সাভারে গণপরিবহনের শ্রমিকরা মহাসড়কে বিক্ষোভ করেও তাদের বেহাল দশার কথা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে।

সাভারে বিক্ষোভ করছে পরিবহন শ্রমিক। ছবিঃ ঢাকা অর্থনীতি

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে গত ২৬ মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় বাস, মিনিবাস, লেগুনা সহ সকল ধরণের যাত্রীবাহী যানবাহন। এতে করে ভীষন ভাবে বিপদে পড়েছে সাভার ও আশুলিয়ার প্রায় তিনশত কাউন্টারের প্রায় দুই হাজার শ্রমিক। কোনমতে খেয়ে না খেয়ে জীবন যাপন করছেন তারা। তাদের মূল আয় হলো টিকিট কমিশন যা পায় তা দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন চালাতেন। চাকাও ঘুড়ছে না চুলাও জ্বলছে না।

সরেজমিনে দেখা যায়, সাভারের হেমায়েতপুর, রাজফুলবাড়িয়া, সাভার বাসস্ট্যান্ড, আশুলিয়ায় বাইপাইল, শ্রীপুর, জিরানী, চক্রবতী, নবীনগর, বিশমাইল কাউন্টার বন্ধ। অধিকাংশ কাউন্টারই বলতে গেলে ফাঁকা। অলস সময় পার করছেন পরিবহন কাউন্টার শ্রমিকেরা।

মনির হোসেন নবীনগরে দেশ ট্রাভেলস, আলহামরা পরিবহন, ডিপজল পরিবহন কাউন্টার পরিচালনা করেন, তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি বিগত বছর খানেক হল এই কাউন্টার পরিচালনা করি কিন্তু আমরা অনেক বিপাকে পড়ে গিয়েছি। গত মার্চ মাসের ১৮ তারিখ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশ ট্রাভেলস পরিবহন। পর্যায়েক্রমে আলহামরা ও ডিপজল পবিবহনও বন্ধ হয়ে যায়। সরকারের পক্ষ থেকে দেশের সবখাতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমাদের দেখার কেউ নাই। অনেক জায়গায় চেয়ারম্যানরা ত্রাণ দিয়েছে আমাদের কেও ত্রাণ দেয় নাই। চোখের সামনে কোন পথ খুজে পাচ্ছিনা।

হতাশা প্রকাশ করে শাহাবুল নামের কাউন্টার মাষ্টার বলেন, ‘কি করোনা আইল, কাজকাম বন্ধ। কোনোভাবে খাইয়া, না খাইয়া আছি। দুই দিনের বাজার আছে। তারপর বউ বাচ্চা নিয়া কি খামু? কারও থেকে ধার নিমু সে সুযোগও নাই। যারা কাজ করে, সবার একই অবস্থা। কারো কাছে হাত তো পাততে পারি না ভাই। আমরা কাজ করার লোক। প্রতিদিন যা কমিশন পাইতাম টিকেট বিক্রি করে তা নিয়ে দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে কোন রকম সংসার চলে যেত। এখনতো সব কিছু বন্ধ। তার মধ্যে দিতে হবে ঘড় ভাড়া এসব চিন্তায় রাতেও ঘুম আসে না।

বাইপাইলের আলহামরা পরিবহন কাউন্টার মাষ্টারের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, ২৪দিন বইসা ছিলাম। বাড়িত চাল নাই। বাজার-সদাইও নাই। দু’দিন আগে পাশে এক কাউন্টার মাষ্টারের কাছ থেকে চাইয়্যা এক হাজার টাকা নিছি। অহন পকেটে একটাকাও নাই। তাই ভয়ে ভয়ে কাউন্টারে আইছি। আসলেও পুলিশে পেটায়। সংসারের খরচ চালামু কেমনে? আক্ষেপ করে বলেন।

কাউন্টারের সামনে বসে অলস সময় পাড় করছিলেন আদিল (২৫)। তিন সদস্যের পরিবারের কর্তা আদিল এখন করোনার কারণে কর্মহীন। হাতগুটিয়ে বসে আছেন, বলে জানালেন তিনি। রাগে-ক্ষোভে অগ্নিশর্মা হয়ে আরেক কাউন্টার মালিক বলেন, কাউন্টার বন্ধ থাকায় খাইয়্যা না খাইয়্যা দিন কাটতাছে। করোনা আমগোর জীবনের চাকাডাই থামাইয়্যা দিছে। নেতারাও সবাই খালি ক্ষমতার লেইগ্যাই কান্দে। আমগোর লেইগ্যা কেউ কান্দে না।

আশুলিয়া সচেতন নাগরিক কমিটি’র সভাপতি লায়ন ইমাম হোসেন জানান, দেশের পরিবহন খাতে নিয়োজিত মানুষগুলো মূলত পুরোটাই যানবাহন চলাচলের উপর নির্ভরশীল। একদিন বন্ধ থাকলেও তাদের জীবিকা নির্বাহ করা খুবই মুশকিল। স্থানীয় ভাবে গুটি কয়েকজন ত্রাণ সামগ্রী পেলেও তা খুবই অপ্রতুল। সরকার ও পরিবহন নেতাদের এ বিষয়ে দায়িত্ব নেয়া উচিত। গণপরিবহন বন্ধের নোটিশের পাশাপাশি তাদের জীবিকা নির্বাহের বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরী।

জেডএইচ/আরএম

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close