আমদানি-রপ্তানীপ্রধান শিরোনামবিশেষ প্রতিবেদন

সিইটিপির শোধনের ক্ষমতার চেয়ে বেশি তরল বর্জ্য সাভার ট্যানারিতে

নদী দূষণসহ পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা থেকেই গেল এই নগরীর

রিফাত মেহেদী, বিশেষ প্রতিনিধি: গল্প কথার সেই পুরোনো মন ভোলানো রসিকতা দিয়েই চলছে সাভারের ট্যানারী শিল্পের বর্জ্য পরিশোধন। এই নগরীর এক পাশে ধলেশ্বরী নদীসহ সরল প্রকৃতি, তার পাশেই ১৭ একর জায়গাতে গড়ে তোলা হয়েছে পরিবেশরক্ষক কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধানাগার’ সিইটিপি। কিন্তু অব্যবস্থানার আধাঁরে ডুবে সিইটিপি এখন পরিবেশ ধ্বংসকারী দানবে রূপ নিয়েছে। এদিকে বর্জ্য পরিশোধনের সেই পুরোনো সমস্যা সামনে রেখেই কোরবানীর পশুর চামড়া ঘিরে ব্যস্ত সময় এখন সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে। সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন’বিসিক ও ট্যানারী মালিক একে অপরের অজুহাত দিলেও নদী দূষণসহ পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা থেকেই গেলো এই নগরীর।

ছবি: সাভারে ট্যানারিতে সিইটিপিতে তরল বর্জ্য পরিশোধনের প্রক্রিয়া।

কারন সিইটিপির ৪টি মডিউলে প্রতিদিন চামড়ার তরল বর্জ্য ২৫ হাজার কিউবিক মিটার পরিশোধন সক্ষমতা, মৌসুম ছাড়াই প্রতিদিন গড়ে শোধন হয় ২০ হাজার কিউবিক মিটার। তাহলে কোরবানির ঈদের বৃহৎ পশুর চামড়া তরল বর্জ্য শোধন হবে কিভাবে। বিগত বছরের মতোই তাই রয়ে গেলো সিইটিপির হাল। তাহলে বিশাল এই তরল বর্জ্য পরিবেশ রক্ষা করে কিভাবে পরিশোধন হবে, তাই নিয়েই শঙ্কা।

রুমা লেদার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী এম আবু তাহের জানান, হাজারীবাগ থেকে ট্যানারী সরিয়ে নিয়ে আসার ফলে বুড়িগঙ্গা নদীর পানি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে। আর সাভারের ট্যানারীতে সিইটিপি যদি সঠিক ভাবে কাজে লাগানো যায়, তাহলে নদীও ভালো থাকবে। এদিকে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে সমস্যা রয়েছে গেছে। এটা দ্রুত সমাধান করা দরকার।

ছবি: ট্যানারি সিইটিপির দেয়াল ঘেষেঁ গবাদি পশু বিচরণ। তবে পরিবেশ বজায় না থাকলে হয়তো অদুর ভবিষ্যতে এমন চিত্র দেখা যাবে না।

সাভারের ভুলুয়া ট্যানারি লিমিটেডের সুপারভাইজার জানান, সিইটিপি ভালোভাবে কাজ করছে না। ময়লা পানিই নদীতে যাচ্ছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে শ্রমিকের নানা রোগসহ দুর্ভোগে পরবে সবাই।

জাতীয় ট্যানারী শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. আবুল বাশার জানান, আগের তুলনায় রাস্তাঘাটসহ অবকাঠোমার উন্নয়ন হয়েছে এই নগরীর। তবে শ্রমিকদের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা ও বাসস্থানসহ নানা সমস্যা এখনো আলোর মুখ দেখেনি। গত এক বছরে প্রায় ৬ থেকে ৭ জন শ্রমিক কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনা বশত নিহত হয়েছে। যদি এখানে কোন হাসপাতাল ও মেডিকেল ক্যাম্প বা প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকতো তাহলে এভাবে প্রাণ হারাতে হতো না।

বাংলাদেশ ট্যার্নাস অ্যাসোসিয়েশন’ বিটিএ এর সাধারণ সম্পাদক মো. সাখাওয়াত উল্লাহ জানান, যদি সাভারের ট্যানারির সিইটিপি পুরোপুরি প্রস্তুত করে হাজারীবাগ থেকে এখানে স্থানান্তর করা হতো, তাহলে এই সমস্যায় পড়তে হতো না। তবে আগের তুলনায় অনেকটা ভালো অবস্থান ট্যানারী নগরীর। পাশাপাশি সিইটিপি পরিচালনায় কোম্পানী গঠন করা হয়েছে। এছাড়া কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিক ভাবে করতে পারলে আর্ন্তজাতিক সনদ পেতেও সহজ হবে।

ছবি: সিইটিপির সঠিক প্রক্রিয়া বজায় রাখলে নদীসহ রক্ষা পাবে পরিবেশ।

এদিকে এ বিষয়ে বিসিকের টেকনিক্যাল অফিসার মো. মাহিন হোসেন জানান, পরিশোধনের ক্ষেত্রে প্রতি টন চামড়ার জন্য ৩০ টন পানি ব্যবহারের নিদের্শনা রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ ট্যানারি সেই নিদের্শনা মানছেন না। এ নিয়ে তদারকি করা হচ্ছে। কিন্তু পুনরায় তারা একই কাজ করছেন। তবে ঈদ মৌসুমে তরল বর্জ্য পরিশোধনের চ্যালেঞ্জের কথা তুলে তিনি আরও বলেন, আমরা ভাগে ভাগে পরিশোধনের কাজটি করার চেষ্টা করি। সিইটিপিতে যেখানে ৮ ঘন্টা পানি ধরে রাখার কথা, সেখানে দুই-এক ঘন্টা কম রেখে ছেড়ে দেয়া হয়।

ছবি: ধলেশ্বরী নদীর বুকে জনমানুষের কোলাহল।

এ বিষয়ে সাভার ট্যানারির সাবেক প্রকল্প পরিচালক আবদুল কাইয়ূম ঢাকা অর্থনীতিকে বলেন, এই সমস্যা সমাধানে আরও দুইটি মডিউল করা প্রয়োজন। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় পর্যায়ে পরিশোধনাগার তৈরি করতে হবে। তাহলেই এই সমস্যা  থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

তবে কোরবানির ঈদের কয়েকদিন আগে সাভারে চামড়া শিল্প নগরী পরিদর্শনে এসে শিল্প সচিব মো. আবদুল হালিম জানান, সব কিছু বিবেচনায় রেখে আগামী বছরের জুনের মধ্যে সাভারে চামড়া শিল্প নগরীর সিইটিপিসহ সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য, ২০০৩ সালে পরিবেশদূষণ রোধে ১ হাজার ৭৯ কোটি টাকা বরাদ্দে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ১৫৫টি কারখানা সাভারের হেমায়েতপুরে ১৯৯ একর জমিতে পরিকল্পিত একটি শিল্পনগরীতে ট্যানারি স্থানান্তরের প্রকল্প শুরু করে সরকার।

ছবি:  খোরশেদ আলম, ফটো সাংবাদিক

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close