দেশজুড়ে

স্ত্রীসহ দুদকের কাছে ফেঁসে যাচ্ছেন টুরিস্ট পুলিশের কর্মকর্তা

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ টুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক মো. শাহজাহানের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, গ্রেপ্তার বাণিজ্য ও নানা অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়ার অভিযোগে ফেঁসে যাচ্ছেন।

তিনি চট্টগ্রামের লোহাগড়া ও সন্দ্বীপ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছিলেন বলে জানা গেছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ওসি শাহজাহান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রায় ৫ কোটি টাকা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পেয়েছে।

এছাড়া নামে-বেনামে তাদের আরও স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ থাকার খোঁজ পাওয়া গেছে। স্ত্রী ফেরদৌসী আক্তারের বিরুদ্ধে এর আগে আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন এবং ভোগদখলে রাখার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর ২৬(১) ধারায় পৃথকভাবে দুজনকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে তাদের জ্ঞাত আয়ের সম্পদের পরিমাণ দাখিল করা হয়।

অভিযুক্ত মো. শাহজাহান বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্যুরিস্ট পুলিশে কর্মরত। কুমিল্লা জেলার লালমাই থানার হাজাতখোলা বাজার কাতালিয়া গ্রামের সুলতান আহমদের ছেলে তিনি। চট্টগ্রামের খুলশী থানার দামপাড়া ১৪ হাইলেভেল রোড লালখানবাজার এলাকায় তিনি পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন বলে জানা গেছে।

দুদক সূত্র জানায়, ১৯৯০ সালে চাকরি শুরুর পর থেকে মো. শাহজাহানের নামে সর্বমোট ২ কোটি ৬৪ লাখ ২৭ হাজার ৭০০ টাকা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৮৬ লাখ ৬৩ হাজার ৩৮৭ টাকা ঋণ হিসেবে দেখানো হয়েছে।

আর চাকরি নেওয়ার পর থেকে তার বৈধভাবে আয় ৭৮ লাখ ৫২ হাজার ৯৭৬ টাকা। পারিবারিক ও অন্যান্য খাতে তিনি ব্যয় করেছেন ২৬ লাখ ১২ হাজার ৪৭৩ টাকা।

সবমিলিয়ে তার বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের পরিমাণ মিলেছে ১ কোটি ২৫ লাখ ২৩ হাজার ৮১০ টাকা।
এছাড়া তার স্ত্রী ফেরদৌসী আক্তারের নামে সর্বমোট স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৩ কোটি ১৭ লাখ ৭৫ হাজার ৬১৭ টাকা।

এর মধ্যে বৈধ আয় ৪৭ লাখ ৮৩ হাজার ৬৫৫ টাকা। পারিবারিক ও অন্যান্য খাতে তিনি ব্যয় করেছেন ১৩ লাখ ২৮ হাজার ৭৩০ টাকা। সবমিলিয়ে তার বিরুদ্ধে ২ কোটি ৮৩ লাখ ২ হাজার ৬৯২ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের প্রাথমিকভাবে খোঁজ পেয়েছে দুদক।

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে লোহাগাড়া থানায় কর্মরত থাকাকালে ওসি শাহজাহানের বিরুদ্ধে ৬০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে দুদকের প্রধান কার্যালয় বরাবরে অভিযোগ পাঠান মো. হারুন নামে এক ব্যক্তি। এ অভিযোগের পর দুদক জেলা সমন্বিত কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ তদন্ত শুরু করে।

সূত্রটি আরও জানায়, গত ২০১২ সালের ১২ জুন লোহাগাড়া থানায় ওসি হিসেবে যোগদান করেন। এরপর থেকে নানা অনিয়ম, গ্রেপ্তার বাণিজ্য, মামলা ও হুমকির ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগে ব্যাপক সোমালোচিত তিনি।

সর্বশেষ থানা হেফাজতে থাকা এক ফৌজদারি মামলার আসামিকে সাজা দেওয়ার ঘটনায় তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন ওসি মো. শাহজাহান।

ওই ঘটনার পর তাকে থানা থেকে উচ্চ আদালত প্রত্যাহার করতে নির্দেশনা দেন। ২০১৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ওসি শাহজাহান সুপ্রিম কার্টের চেম্বার আদালতে গিয়ে বদলির আদেশ খারিজের আবেদন করেন।

এরপর একই বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি তার আবেদনের ওপর শুনানির তারিখ নির্ধারণ করে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠানো হয়। পরে ১৫ ফেব্রুয়ারি ওসির আবেদন খারিজ করে লোহাগাড়া থানা থেকে প্রত্যাহারের আদেশ বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্ট।

আরেক সূত্র জানায়, গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন শাখার-১-এর নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা স্বাক্ষরিত এক আদেশে মো. শাহজাহানকে লোহাগাড়া থানা থেকে চট্টগ্রাম পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।

পুলিশের লাইনে সংযুক্ত থাকার এক মাসের মাথায় ওসি মো. শাহজাহান পুনরায় একই থানায় ওসি হিসেবে নিয়োগ নিয়ে যোগদান করেন।

তার একদিন পর ২০১৮ সালের ১৮ মার্চ অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. খসরুকে হয়রানিসহ তার বাড়িঘরের জিনিসপত্র এলোমেলো করে পুলিশের ১৮-২০ জনের একটি দল।

এতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন। তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশও করা হয়। গত জুন মাসে তাকে নারায়ণগঞ্জ জেলার ট্যুরিস্ট পুলিশে বদলি করা হয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন জেলা সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২-এর সহকারী পরিচালক মো. হুমায়ুন কবীর তদন্ত করছেন।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ‘চাকরিতে যোগদানের পর থেকে ওসি মো. শাহজাহান ও তার স্ত্রী ফেরদৌসী আক্তারের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে ৪ কোটি ৮২ লাখ ৬ হাজার ৫০২ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে।

আর নামে বেনামে আরও স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ থাকারও তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে দুদক। ‘ইতোমধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেছেন শাহজাহান ও তার স্ত্রী। যাচাই-বাছাই শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার সুপারিশ করা হবে।’

এ ব্যাপারে ওসি শাহজাহান বলেন, ‘আমি ও আমার স্ত্রীকে দুদক কার্যালয়ে ডাকা হয়েছিল। আমরা আমাদের সম্পদের হিসাব দাখিল করেছি দুদকের কাছে। তদন্তে আমরা নির্দোষ প্রমাণিত হব।

চট্টগ্রামে থাকা অবস্থায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে কাজ করেছি। তাই সেখানে আমার কিছু শত্রু হয়েছে। তারাই তার বিরুদ্ধে এগুলো করাচ্ছে বলে জানান তিনি।

/আরএম

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close