জীবন-যাপনস্বাস্থ্য

স্বপ্ন ‘শেখার’ প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন গবেষকরা

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ স্বপ্নের মধ্যে আমরা সব আজব, যুক্তিহীন কাণ্ডকারখানা দেখি, প্রায়ই যার কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না৷ কিন্তু দিবাস্বপ্নের ক্ষেত্রে যুক্তি তা হতে দেয় না৷ নেদারল্যান্ডসের গবেষকরা এমন স্বপ্ন দেখার প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গড়ে তুলছেন৷

স্বপ্নের রকমফের

স্বপ্নে প্রকৃতির নিয়মও খাটে না৷ এমনকি গল্পের গরু দিব্যি গাছে উঠতে পারে৷ তখন অদ্ভুত সব পরিস্থিতির অভিজ্ঞতা হয়৷ সাধারণত স্বপ্ন দেখার সময় আমরা সে বিষয়ে সচেতন থাকি না৷ কিন্তু যখনই টের পাই যে আমরা আসলে স্বপ্ন দেখছি, তখনই সেটা লুসিড ড্রিম বা দিবাস্বপ্ন হয়ে ওঠে৷ আমরা কিন্তু সেই স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না৷ প্রায় অর্ধেক মানুষের কমপক্ষে একবার এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে৷

 নেদারল্যান্ডসের নাইমেখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্টিন ড্রেসলার দিবাস্বপ্ন নিয়ে গবেষণা করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এটি সত্যি অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও বিরল ঘটনা৷ বিশেষ করে স্বপ্নের সার্বিক ক্রিয়ার প্রেক্ষাপটে এর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে৷ অর্থাৎ স্বপ্নের সম্ভবত এক জৈব ক্রিয়াও রয়েছে৷ সেটা সত্য হলে তার নিউরো-বায়োলজিকাল ভিত্তি কত গভীর, তা জানতে হবে৷ লুসিড ড্রিমের মাধ্যমে আমরা সম্ভবত স্বপ্ন ও  সার্বিকভাবে ঘুমের ক্রিয়া সম্পর্কে জানতে পারছি৷”

লুসিড ড্রিমের রহস্য

লুসিড ড্রিমের সময়ে  মস্তিষ্কে ঠিক কী ঘটে, মার্টিন ড্রেসলার তা জানতে চান৷ সেই লক্ষ্যে তিনি স্বেচ্ছাসেবীদের এমআরটি পাইপে ঘুমাতে দিয়েছেন এবং একটি ক্ষেত্রে ইইজি যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত করেছেন৷ মস্তিষ্কের কোন কোন অংশ সক্রিয় রয়েছে, তাঁদের ব্রেনওয়েভের মাধ্যমে তা দেখা যাচ্ছে৷

সাধারণ স্বপ্নের তুলনায় লুসিড ড্রিমের ক্ষেত্রে আমাদের যুক্তিবোধ কাজ করে৷ ড. মার্টিন ড্রেসলার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘মস্তিষ্কের কার্যকলাপের মধ্যে সেটা লক্ষ্য করা যায়৷ বিশেষ করে কপালের ঠিক পেছনের অংশে আমরা উল্লেখযোগ্য মাত্রার বাড়তি কার্যকলাপ লক্ষ্য করেছি৷ প্রায় জেগে থাকার অবস্থার মতো সজাগ থাকে৷”

আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করে গবেষকরা লুসিড ড্রিম শেখার নতুন প্রক্রিয়ার খোঁজ করছেন৷ ড. ড্রেসলার বলেন, ‘‘একটি প্রচলিত কৌশল হলো, দিনে বেশ কয়েকবার নিজেকে প্রশ্ন করা – আমি কি জেগে আছি, না স্বপ্ন দেখছি? বিশেষ করে

অস্বাভাবিক বা স্বপ্নময় পরিস্থিতিতে এমন প্রশ্ন তোলা উচিত৷ যথেষ্ট ঘনঘন এমনটা করলে বিষয়টি স্বপ্নে পরিণত হয়৷ তখন স্বপ্নের মধ্যেও নিজেকে প্রশ্ন করি, আমি কি জেগে আছি, না স্বপ্ন দেখছি?”

স্বপ্ন ও বাস্তবের মেলবন্ধন

যুক্তির অভাব বা অদ্ভুত পরিস্থিতি স্বপ্নের লক্ষণ হতে পারে৷ স্বপ্নের সময় কোনো বস্তু বা বিষয় দীর্ঘ সময় ধরে দেখলে তা অস্পষ্ট হয়ে যায়৷ যেমন দিনে বেশ কয়েকবার নিজের হাতের দিকে তাকানোর অভ্যাস থাকলে কোনো এক সময় স্বপ্নের মধ্যেও তা করার প্রবণতা বাড়বে৷ স্বপ্নের মধ্যে হাতে পরিবর্তন ঘটে৷ ফলে তখন স্পষ্ট বোঝা যায়, যে আমরা স্বপ্ন দেখছি৷

ভার্চুয়াল রিয়ালিটির মতো কম্পিউটার সিমুলেশন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিশেষ চশমা পরলে সব দৃশ্য আসল মনে হয়৷ মার্টিন ড্রেসলার এর মাধ্যমে লুসিড ড্রিম শেখার কাজ সহজ করে তুলতে চান৷ তিনি বলেন, ‘‘দৈনন্দিন জীবনে এমন স্বপ্নময় পরিস্থিতি খুব বিরল৷ ভার্চুয়াল রিয়ালিটির ক্ষেত্রে আমরা সহজে প্রোগ্রাম করতে পারি৷ অর্থাৎ আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা স্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে থেকেও মাঝেমাঝে কিছু অদ্ভুত পরিস্থিতির স্বাদ পাচ্ছেন৷ ঠিক এমন সব মুহূর্তে তাঁদের মনে প্রশ্ন জাগছে, আমি কি জেগে আছি না ঘুমাচ্ছি?”

একজন স্বেচ্ছাসেবীর সিমুলেটেড স্বপ্নের অভিজ্ঞতা হচ্ছে৷ তাঁকে ফাইল সাজানোর কাজ দেওয়া হয়েছে৷ পরিস্থিতি অদ্ভুত হয়ে পড়লে তিনি নিজেকে প্রশ্ন করছেন, তিনি জেগে আছেন না স্বপ্ন দেখছেন৷

এক সাম্প্রতিক গবেষণার জন্য স্বেচ্ছাসেবীরা সপ্তাহে তিন বার ৪৫ মিনিট ধরে ভার্চুয়াল রিয়ালিটি গবেষণাগারে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন৷ ড. ড্রেসলার বলেন, ‘‘আমরা বর্তমানে তথ্য সংগ্রহের কাজ করছি৷ সাধারণ প্রশিক্ষণের তুলনায় ভার্চুয়াল রিয়ালিটি ট্রেনিং অনেক বেশি কাজে লাগছে বলে এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে৷” এই প্রক্রিয়ার কল্যাণে ভবিষ্যতে হয়তো আরও বেশি মানুষ সচেতনভাবে নিজেদের স্বপ্ন গড়ে তুলতে পারবেন৷

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close