দেশজুড়ে

সাভারে বালু দিয়ে পুকুর ভরে হকার্স লীগের মার্কেট

আজহারুল ইসলাম শিমুল, সাভারঃ আইন লঙ্ঘন করে ঢাকার সাভারে সরকারি একটি পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। হকার্স মার্কেটের কথা বলে স্থানীয় হকার্স লীগের নেতারা পুকুরটি ভরাট করছেন। কয়েক মাস ধরে সেখানে বালু ফেলা হলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুকুরটির অবস্থান সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জালেশ্বর মৌজায়। আয়তন ১১২ শতাংশ। পুকুরটি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে উত্তরণ সমবায় ফাউন্ডেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে। ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সেখানে মাছের চাষ করার প্রস্তুতি চলছিল। এ অবস্থায় গত বছরের আগস্ট মাসে পুকুরের পাশে ‘ডা. এনামুর রহমান হকার্স মার্কেট’ নামে একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়। কয়েক দিন পরে ওই সাইনবোর্ড নামিয়ে সেখানে ‘সাভার হকার্স মার্কেট’ নামে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়। সম্প্রতি পুকুরের এক পাশে বালু ফেলে ভরাট করা হচ্ছে।

উপজেলা প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে, ভরাট করে মার্কেট বানানোর জন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে পুকুর বন্দোবস্ত দেওয়া হয়নি। তবে পুকুরের আংশিক ভরাট হয়ে যাওয়ায় শ্রেণি পরিবর্তন করে জলমহালের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।

কিন্তু প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০ অনুযায়ী, কোনো পুকুর, জলাশয়, নদী, খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি। আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী, প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন বা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার, ভাড়া, ইজারা বা হস্তান্তর বেআইনি। কোনো ব্যক্তি এ বিধান লঙ্ঘন করলে আইনের ৮ ও ১২ ধারা অনুযায়ী পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। একই সঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (২০১০ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী, যেকোনো ধরনের জলাশয় ভরাট করা নিষিদ্ধ।

এই আইন লঙ্ঘন করে বাংলাদেশ আওয়ামী হকার্স লীগ ও বাংলাদেশ হকার্স লীগের স্থানীয় নেতারা পুকুর ভরাট করে মার্কেট করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এ জন্য তাঁরা হকারদের কাছ থেকে দৈনিক ও এককালীন চাঁদা আদায় করছেন।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মহাসড়কের পশ্চিম পাশে বেশ কয়েকটি ফলের আড়ত। আড়তের পেছনেই বিশাল আকারের পুকুর। প্রায় এক বছর ধরে মাছের চাষ বন্ধ থাকায় পুরো পুকুর জংলা কচুতে ছেয়ে গেছে। পুকুরের একপাশে বালু ভরাট করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে ইউসুফ আলী নামে ফলের আড়তের এক কর্মচারী বলেন, কয়েক মাস আগে হকার্স লীগের নেতারা ট্রাকে করে এনে পুকুরে বালু ফেলেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হকার বলেন, মাটি ভরাটের কথা বলে তাঁদের কাছ থেকে প্রতিদিন ২০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়। এ ছাড়া অনেকের কাছ থেকে এককালীন ২০ হাজার টাকা চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ করেন তাঁরা।

হকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ আওয়ামী হকার্স লীগের সাভারের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক লিটন খান বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পশ্চিম পাশ এবং বাংলাদেশ হকার্স লীগের সভাপতি আব্দুল কাদির মোল্লা মহাসড়কের পূর্ব পাশ নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। তাঁদের ছত্রচ্ছায়ায় মহাসড়কের দুই পাশে ফুটপাতের ওপর দোকান বসে। এসব দোকান থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন হারে চাঁদা আদায় করা হয়। প্রশাসন ও নেতাদের কথা বলে নিয়মিত চাঁদা আদায় করা হলেও হকার উচ্ছেদে পুলিশ মাঝেমধ্যে অভিযান চালায়। এ জন্য স্থায়ীভাবে ব্যবসা করার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে হকার্স লীগ নেতারা পুকুর ভরাট করে মার্কেট করার উদ্যোগ নেন।

বাংলাদেশ আওয়ামী হকার্স লীগ সাভার শাখার সাধারণ সম্পাদক লিটন খান বলেন, ‘বাসস্ট্যান্ড এলাকা হকারমুক্ত রাখতে আমাদের নেতারা পুকুর ভরাট করে হকারদের জন্য মার্কেট করার আশ্বাস দিয়েছেন। প্রশাসনেরও সম্মতি আছে। এ জন্য আমরা সাইনবোর্ড দিয়ে পুকুরে বালু ফেলেছি।’

জানতে চাইলে সাভারের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাকৃতিক কারণে সরকারি পুকুরটি আংশিক ভরাট হয়ে গেছে, যা ব্যবহার উপযোগী নয়। এ জন্য বিকল্প ব্যবস্থা নিতে পুকুরের শ্রেণি পরিবর্তনসহ জলমহালের তালিকা থেকে বাদ দিতে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাব অনুমোদন হলে খাসজমি হিসেবে তা হকারদের মধ্যে বন্দোবস্তের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করা হবে। সেই আলোকে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে।’

বন্দোবস্তের আগেই পুকুর ভরাটের বিষয়ে ইউএনও মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’

/আরএম/

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close