আশুলিয়াপ্রধান শিরোনামস্থানীয় সংবাদ

আশুলিয়ায় খাতার মলাটে মিললো কফিল উদ্দিন হত্যারহস্য, নারী গ্রেফতার

আবদুল কাইয়ূম, নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতিবেশীর খবরে কফিল উদ্দিনের টিনের ঘর থেকেই তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। বয়স প্রায় ৬৫ বছর। ঘটনাটি গত ২২ মার্চ আশুলিয়ার বঙ্গবন্ধু রোডে। দরজায় বাইরে থেকে তালাবদ্ধ। ভিতরে পড়ে আছে কফিল উদ্দিনের নিথর দেহ। হাতে ছিলো ইন-হেলার। শ্বাস-প্রশ্বাসে তার সমস্যার জন্য ব্যবহার করতো। শরীরে কোন আঘাতে চিহৃ নেই। তবে কি অসুস্থ হয়েই শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা থেকেই মারা গেলেন? সে প্রশ্ন খুঁজতে মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হলো। গ্রামের বাড়ি জামালপুরে হলেও আশুলিয়ার বঙ্গবন্ধু সড়কে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ডা. সাফকাতের বাড়ির তত্ববোয়ক হিসেবে কাজ করছিলেন।

শরীরে আঘাতের চিহৃ নেই। মারা যাওয়ার সঠিক কারণও রহস্যজনক। নানা প্রশ্ন নিয়ে ঘুরপাক চলতে থাকে পুলিশের তদন্ত। ঘটনার পর থেকে পাশের ঘরে এক নারীও নিখোঁজ। তাহলে ঘটনা কি? পাশের ঘরের নারীর ঠিকানা তো পরে কেউ নামও বলতে পারছেন না। যাই হোক, সেই ঘর তল্লাশী করে গিয়েও হতাশ আশুলিয়া থানার এস আই সুদীপ কুমার গোপ। কারন নারী ঘরে কোন কিছুই নেই। হতাশ নিয়ে বের হওয়া সময় পড়ে থাকা খাতার মলট সংগ্রহ করেন। সেখানে একটি শিশুর নাম ও একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম দেখতে পান।

শুরু হয় যেন নদী থেকে সুই খঁজে বের করা। সেই খাতার মলাটে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিশুর সন্ধান। পাশাপাশি নিহত কফিল উদ্দিনের খোয়া যাওয়া মুঠোফোনের সূত্র ধরে এগোতে থাকেন। এরমধ্যে খাতার সেই মলাটের সূত্র ধরে প্রতিবেশী সেই নারী নাম ও ঠিকানা প্রাথমিকভাবে সংগ্রহ করা হয়েছিলো।

তারপর! শুরু হলো সন্দেহজনক নারীর কাছে কিভাবে পৌছানো যায়। এরমধ্যে তৃতীয় এক ব্যক্তির সন্ধান মিললো। যার সাথে ওই নারী যোগযোগ রয়েছে। দ্রুতই সেই ব্যক্তিকে খুঁজে বের করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হলো। সেই  সূত্র ধরে নিখোঁজ নারীকে সন্ধান মিললো।

এঘটনায় শুক্রবার (১৮ জুন) ভোর রাতে আশুলিয়ার জিরাবো এলাকার রিপনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে হত্যাকারী রিতা বেগম নামে নারীকে আটক করা হয়। পরে শুক্রবার সকালে নিহতের স্ত্রী হানুফা বেগম বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। আটক রিতা বেগমকে এই মামলা গ্রেফতার দেখিয়ে দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়। যদিও ৩ মাস আগে ২৩ মার্চ কফিল উদ্দিন নিহতের ঘটনায় আশুলিয়ায় থানায় অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছিলো।

গ্রেফতার রিতা বেগম (২৯) নওগাঁ জেলা সদরের চকরামচন্দ্র মহল্লার খাইরুল ইসলামের মেয়ে।

নিহত কফিল উদ্দিন জামালপুর জেলার ইসলামপুর থানার পাতুসি গ্রামের মৃত কাজী মুনশী শেখের ছেলে। তিনি আশুলিয়ার বঙ্গবন্ধু সড়কের ডাক্তার শাফকাথ হোসেনের বাড়ির কেয়ারটেকার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

রিতা বেগম আটকের মধ্য দিয়ে প্রাথমিকভাবে জানা যায় কফিল উদ্দিন হত্যার শিকার হয়েছিলেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন এস আই সুদীপ কুমার গোপ। তিনি জানান, শুরুতেই সন্দেহ হয়েছিল এটি হত্যাকান্ড। কিন্তু নিহতের শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায় নি। তার শ্বাসকষ্ট ছিল আর হাতেও ইন হেলার। কিন্তু দরজা বাহির থেকে আটকানো ছিল।

গ্রেফতার ওই নারীর বরাত দিয়ে সুদীপ কুমার গোপ আরও বলেন, কফিল উদ্দিন সাফকাত হোসেনের বাড়ির কেয়ারটেকার ছিলেন। আর ওই বাসায় রিতা বেগম ভাড়া থাকতেন। সেখানে ভাড়া থাকায় কফিল উদ্দিনের সাথে ভাল সম্পর্ক হয় রিতার। এই সুবাদে কফিলের তরকারি মাছ ইত্যাদি কেটে দিয়ে সহযোগিতা করতেন রিতা। ঘটনার দিন রাতে কফিলের মাছ কেটে তার ঘরে দিতে গেলে কফিল কুপ্রস্তাব দেয় রিতাকে। রাজি না হলে জোরাজোরি করে কফিল। এসময় রিতা তার গলা চেপে ধরলে কপিল মেঝেতে পড়ে মারা যায়। পরে তার হাতে ইন হেলার ধরে দিয়ে সকালে বাসা ছেড়ে চলে যায় রিতা। সাথে ছোট বোন ও শিশুসহ সব প্রমান উধাও করেই চম্পট দিয়েছিলেন রিতা। কিন্তু পুলিশের চৌকসতা ও একটি খাতার মলাটের সূত্র ধরে ধরা পড়লেন হত্যাকারী রিতা।

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close