তথ্যপ্রযুক্তি

জিপি-রবি’র বকেয়া ১৩ হাজার কোটি টাকা

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ দেশের শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবি আজিয়াটার কাছে পাওনা যথাক্রমে ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ ও ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা আদায় কি ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে? তিন সপ্তাহের মধ্যে ‘উইন উইন সিচুয়েশনে’র মাধ্যমে বিষয়টি আপোষ-মীমাংসা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল।

কিন্তু ২৪ দিন পেরিয়ে গেলেও কোনো কুল কিনারা হয়নি। উল্টো নিরীক্ষা আপত্তির ‘পাওনা’ টাকা আদায় করতে না পেরে লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না জানতে চেয়ে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির ‘কারণ দর্শাও’ নোটিসের জবাবে মামলার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে গ্রামীণফোন ও রবি।

সম্প্রতি বিটিআরসিতে পাঠানো জবাবে অপারেটর দুটি বলছে, এ লিগ্যাল নোটিস জারির আগেই আদালতে এ বিষয়ে একটি মামলা বিচারাধীন থাকায় এর গ্রহণযোগ্যতা নেই।

গ্রামীণফোনের কাছে নিরীক্ষা আপত্তির দাবির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং রবির কাছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে বলে দাবি করে আসছে বিটিআরসি। কয়েক দফা চেষ্টায় সেই টাকা আদায় করতে না পেরে লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দিয়ে গত ৫ সেপ্টেম্বর নোটিস পাঠানো হয় দুই অপারেটরকে। নোটিসে ৩০ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছিল।

গ্রামীণফোন এক ই-মেইল বার্তায় বলেছে, “টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের অমীমাংসিত এবং ভিত্তিহীন অডিট দাবির জটিলতা নিরসন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করার জন্য আমরা অর্থমন্ত্রী, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আমাদের লাইসেন্স বাতিল সংক্রান্ত বিটিআরসির ভিত্তিহীন শোকজ নোটিসটি যেহেতু তুলে নেওয়া হয়নি, সেহেতু আমরা আমাদের প্রত্যুত্তর দাখিল করেছি।”

রবি আজিয়াটা লিমিটেডের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, “বিতর্কিত নিরীক্ষা আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে বিটিআরসি আমাদের কাছে যে লিগ্যাল নোটিস পাঠিয়েছে, তার আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। কারণ এ লিগ্যাল নোটিস জারির আগেই আদালতে এ বিষয়ে একটি মামলা বিচারাধীন আছে। আর বিচারাধীন কোনো বিষয়ের ওপর কোনো মন্তব্য আমাদের পক্ষে করা সম্ভব নয়। তবে এ বিষয়ে আমরা আগে যা বলেছি, নতুন করে তার ওপর কিছু বলার নেই।”

বিটিআরসির দাবি করা টাকার ওই অঙ্ক নিয়ে আপত্তি রয়েছে গ্রামীণফোন ও রবির; বিটিআরসি সালিশের মাধ্যমে বিষয়টির নিষ্পত্তিতে রাজি না হওয়ায় এর আগেই দুই অপারেটর আদালতে যায়। খোদ অর্থমন্ত্রী এই বিরোধ মীমাংসার উদ্যোগ নেওয়ার পর গ্রামীণফোনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নানা পর্যায়ে আলোচনা শুরু করে সরকার।

১৮ সেপ্টেম্বর অর্থমন্ত্রী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “তিন সপ্তাহের মধ্যে ‘উইন উইন সিচুয়েশনে’ থেকে বকেয়া পাওনা আদায় করা হবে। যাতে করে কারোরই হার-জিত না হয়।” তবে আজ শনিবার তিন সপ্তাহ (২৪ দিন) পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে কার্যত কোনো উদ্যোগ নেয়নি সরকার। বিষয়টিকে ভিন্ন চোখে দেখছেন খাত সংশ্লিষ্ট সংগঠন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন।

সংগঠনটির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, মাননীয় অর্থমন্ত্রীর ‘উইন উইন সিচুয়েশন’র সময় অতিবাহিত হয়েছে কোন অগ্রগতি ছাড়াই। অথচ জিপি ও রবি গত ৭ অক্টোবর বিটিআরসির পাঠানো ৫ সেপ্টেম্বর লাইসেন্স বাতিলের নোটিশের জবাবে বলেছে, বিটিআরসির অডিট আপত্তি ভিত্তিহীন।

অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিল জিপি ও রবির মামলা প্রত্যাহার করবে এবং বিটিআরসির তাদের নোটিশও প্রত্যাহার করবে। কিন্তু কোন পক্ষই এই নির্দেশনা মান্য করেনি। বরং উল্টো বিটিআরসির পাওনাকে ভিত্তিহীন বলে জনগণের টাকায় অডিট নিষ্পত্তির ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিটিআরসি যদি প্রমাণ করতে না পারে যে অপারেটরদের বক্তব্য সঠিক নয় তাহলে বিটিআরসির চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দায়ভার নিয়ে সরে দাঁড়ানো উচিত। দেশের সকল গ্রাহক দ্রুত সময়ের মধ্যে এই পাওনা আদায় ও মীমাংসা চায়।

 

/আরকে

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close