দেশজুড়ে

বাচ্চার জন্য দুধ চুরি, শেষে পেলেন চাকরি

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ তিন মাস ধরে চাকরি নেই, নেই বেতনও। সংকটের সংসার। কিন্তু ঘরে ফুটফুটে একটি শিশু। ক্ষুধায় চিৎকার করে সন্তান। চোখের সামনে সেই দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে একটি সুপার শপ থেকে দুধ চুরি করতে বাধ্য হন শিশুটির বাবা।

তবে এই চুরি করতে গিয়ে বাধে বিপত্তি। শিশুটির বাবার চুরি ধরা পড়ে জনসাধারণের হাতে। খান মারধর। আমজনতা তাঁকে টেনেহেচড়ে নিয়ে যান ঢাকা মহানগর পুলিশের খিলগাঁও জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) জাহিদুল ইসলামের কাছে।

ঘটনাটি গতকাল শুক্রবার রাতের। খিলগাঁওয়ে সিটি করপোরেশন সুপার মার্কেটের সামনে শহীদ বাকি সড়ক এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। আমজনতা ও চুরির দায়ে অভিযুক্ত শিশুটির বাবার কাছ থেকে পুরো ঘটনা শোনেন এসি জাহিদুল। সাধারণ মানুষ এসিকে জানালেন, ‘স্বপ্ন সুপার শপ থেকে লোকটি এক প্যাকেট দুধ চুরি করে পালাচ্ছিলেন।’

সামান্য এক প্যাকেট দুধ চুরি করে ধরা খেলেন লোকটি। বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছর হবে। তাঁকে দেখতেও ভদ্র মনে হয় পুলিশ কর্মকর্তার। তাঁর কাছ থেকেও ঘটনা জানতে চান জাহিদুল ইসলাম।

চুরি করলেন কেন-এমন প্রশ্ন জানতে চাইলে লোকটি কাঁদতে কাঁদতে জাহিদুল ইসলামকে বললেন, ‘স্যার, তিনমাস হলো চাকরি নাই, বেতন নাই। ঘরে ছোট বাচ্চা, দুধ কেনার টাকা নাই। তাই চুরি করছি। বাচ্চাকে তো বাঁচাতে হবে? কি করবো বলেন?’

জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সড়কের চেকপোস্ট ডিউটি তদারকি করছিলাম। এমতাবস্তায় একটি স্থানে কিছু লোক হট্টগোল করতে দেখলাম। তখন একজন উপপরিদর্শককে (এসআই) পাঠালাম ঘটনাস্থলে। কিছু লোক একজনকে টেনেহেচড়ে আমার কাছে নিয়ে এলো। ঘটনার বিস্তারিত শুনলাম। লোকটিকে টেনেহেচড়ে এনে শক্ত করে ধরে রাখা একজন সিকিউরিটি গার্ড বললেন, ‘লোকটি সুপার শপ থেকে এক প্যাকেট ন্যান দুধ চুরি করে পালাচ্ছিলেন।’

তবে অভিযুক্ত লোকটি বললেন, ‘তিন মাস ধরে চাকরি নেই। কাছে টাকা নেই। ঘরে শিশু বাচ্চা আছে। তাই নিজের সন্তানকে খেতে দেওয়ার জন্য দুধ চুরি করেছি।’

ডিএমপি খিলগাঁও জোনের সহকারী কমিশনার জাহিদুল ইসলাম তখন সেই দুধের টাকা মিটিয়ে দিয়ে সেই বাবাকে ছেড়ে দিতে বলেন। সেই ঘটনা তিনি সোশ্যাল সাইটে পোস্ট করলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। প্রথম সারির বেশ কিছু গণমাধ্যম জাহিদুলের স্ট্যাটাসটি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে। এরপরেই সুপার শপ ‘স্বপ্ন’ এ বিষয়ে উদ্যোগী হয়।

শনিবার (১১ মে) সন্ধ্যায় প্রতিষ্ঠানটির হেড অব মার্কেটিং তানিম করিম গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমাদের নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসিরের নির্দেশে সেই বাবা এবং বাচ্চার দায়িত্ব নিচ্ছে সুপার শপ কর্তৃপক্ষ। আমরা ইতোমধ্যে পুলিশ কর্মকর্তার সহায়তায় ওই বাবাকে খবর পাঠিয়েছি, আমি নিজে খিলগাঁও আউটলেটে আছি। তিনি এলে আপাতত এ মাসের প্রয়োজনীয় সব বাজার তাকে দিয়ে দেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগামী ১২ মে রবিবার তাকে সাক্ষাতকার দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। নির্বাহী পরিচালক নিজেই তার ইন্টারভিউ নেবেন। যোগ্যতা অনুযায়ী ওই বাবা এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাবেন।’

/আরএম

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close