বিশ্বজুড়ে

শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাতে তুরস্কে নিহত ৪, আহত ১২০ জন

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাতে তুরস্কে অন্তত চারজন নিহত ও আরও ১২০ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া আরও অনেকেই বেশ কিছু ভবনের ধ্বংসস্তুপের নিচে আটকা পড়েছেন। একই ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে গ্রিসও; সেখানেও বেশ কিছু বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার। শুক্রবার সন্ধ্যার দিকের এই ভূমিকম্পের পর ইজিয়ান সাগরের তীরবর্তী এলাকায় সুনামি দেখা দিয়েছে। সাগর উত্তাল হয়ে ওঠায় তুরস্কের ইজমির শহরের ও গ্রিসের কিছু রাস্তা পানিতে ডুবে গেছে।

গ্রিসের সরকারি টেলিভিশনে খবরে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পের পর পূর্বাঞ্চলীয় ইজিয়ান সাগরের সামোস দ্বীপে ক্ষুদে-সুনামির সৃষ্টি হয়েছে। এতে সামোসের বেশ কিছু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মার্কিন ভূ-তাত্ত্বিক জরিপসংস্থা ইউএসজিএস বলছে, রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পটি গ্রিসের সামোস দ্বীপের কারলোভাসি শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে উৎপত্তি হয়েছে। রাজধানী এথেন্স এবং তুরস্কের ইস্তাম্বুলেও কম্পন অনুভূত হয়েছে।

তবে তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় ইজমির প্রদেশের সেফারিহিসারে শক্তিশালী ৬ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। অন্যদিকে, গ্রিসের ভূমিকম্প জরিপ সংস্থা বলছে, ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৭।

তুরস্কের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, দেশটির পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকা ও গ্রিসের কিছু অংশে শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে। এতে এখন পর্যন্ত চারজন নিহত ও আরও ১২০ জন আহত হয়েছেন। ধসে পড়া কয়েক ডজন ভবনের নিচে অনেকেই আটকা রয়েছেন বলে আশঙ্কা করছে তুর্কি এই মন্ত্রণালয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ইজমির শহরে ধসে যাওয়া ভবনের ধ্বংসস্তুপের নিচে তল্লাশি চালাচ্ছেন স্থানীয়রা। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ভূমিকম্পের সময় তুরস্কের ইস্তাম্বুল, ইজমির ও অন্যান্য শহরের বাসিন্দারা বাড়ি-ঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন। একই দৃশ্য দেখা যায় গ্রিসেও।

তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেইমান সোয়লু এক টুইটে বলেছেন, ইজমিরের বায়রাকলি এবং বোর্নোভা জেলায় অন্তত ছয়টি ভবন ধসে পড়েছে। এছাড়া এই ভূমিকম্পে উসাক, দেনিজলি, মনিসা, বালিকেসির, আয়দিন এবং মুগলা প্রদেশেও হালকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

দেশটির পরিবেশ মন্ত্রী মুরাত কুরুম বলেছেন, আমাদের বেশ কয়েকজন নাগরিক ধ্বংসস্তুপের নিচে আটকা পড়েছেন। তিনটি ভবন ধসে পড়েছে বলে জানিয়েছেন তুর্কি এই মন্ত্রী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ছবিতে দেখা যায়, সমুদ্রের উত্তাল গর্জনে ইজমির শহরের রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। নগরীতে ভবন ধসের স্থানগুলো থেকে ঘন সাদা রঙয়ের ধোয়া উড়ছে।

দেশটির সরকারি টেলিভিশন টিআরটির ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্ধারকারী দলের সদস্যদের সহায়তায় এগিয়ে আসছেন। পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরাও ধসে পড়া ভবনের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছেন। ধ্বংসস্তুপের নিচে আটকা পড়াদের মধ্যে কেউ জীবিত রয়েছেন কিনা তা জানতে শব্দ শোনার জন্য উদ্ধারকারীরা উৎসুক জনতাকে নীরবতা পালনের আহ্বান জানাচ্ছেন।

ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয়রা উদ্ধারকারীদের সহায়তা করার জন্য মানব শৃঙ্খল তৈরি করে ধ্বংসস্তুপ সরাচ্ছেন। সিএনএন তুর্কের ফুটেজে দেখা যায়, উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা ধসে পড়া একটি ভবনের ভেতর থেকে জীবিত এক নারীকে বের করে নিয়ে আসছেন।

ভূমিকম্পের পর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ক্ষতিগ্রস্তদের সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন।

সামোস দ্বীপের ডেপুটি মেয়র মিখাইলিস মিটসিওস স্থানীয় সম্প্রচারমাধ্যম ইআরটিকে বলেন, দ্বীপের কাছে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি হয়েছে। ভূমিকম্পের সময় সেখানকার আতঙ্কিত বাসিন্দারা রাস্তায় চলে আসেন। কিছু কিছু বাড়ির প্রাচীর ভেঙে পড়েছে এবং কিছু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

গ্রিস এবং তুরস্ক বিশ্বের অন্যতম ভূমিকম্প সক্রিয় প্রবণ অঞ্চলে অবস্থিত দুটি দেশ। প্রায়ই এই অঞ্চলে শক্তিশালী এবং মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। ১৯৯৯ সালে তুরস্কের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৪ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে অন্তত ১৭ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে।

২০১১ সালেও দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ভ্যান প্রদেশে শক্তিশালী এক ভূকম্পনে ৬ শতাধিক মানুষ মারা যান। গ্রিসে সর্বশেষ প্রাণঘাতী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল ২০১৭ সালে। ওই বছরের জুলাইয়ে সামোসের কাছের কোস দ্বীপে শক্তিশালী ভূমিকম্পে অন্তত দু’জনের প্রাণহানি ঘটে। সূত্র : বিবিসি।

/এন এইচ

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close