করোনাপ্রধান শিরোনামবিশেষ প্রতিবেদন

হাসপাতালে পাঠালেও ১ মাস ধরে নিখোঁজ সাভারের করোনা রোগী

রিফাত মেহেদী, বিশেষ প্রতিনিধিঃ একমাস আগে করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেও সন্ধান মিলছে না সাভারের কাউন্দিয়ার এক রোগীর। করোনা উপসর্গ নিয়ে সাভারের কাউন্দিয়ার পশ্চিম পাড়ায় বাসায় ছিলেন নিখোঁজ আক্তার হোসেন। সন্দেহ হলেও সাভারে টেস্ট করতে না পেরে নিজেই চলে যান ঢাকাস্থ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে টেস্ট করে জানতে পারেন তিনি করোনা পজিটিভ।

গত ২৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহায়তায় তাকে ঢাকায় হাসপাতালে পাঠানো হয়। লকডাউন করা হয় তার পরিবারকে। পরিবারকে জানানো হয় আক্তার মিরপুরের একটি হাস্পাতালে আছেন। করোনা বিশেষায়িত হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে ২৩ এপ্রিল তারিখে ভর্তিকৃত রোগীদের তালিকায় খুজে পাওয়া যায়নি আক্তার হোসেনের নাম।

পুলিশ জানিয়েছিল তাকে মিরপুরের লালকুঠি হাসপাতালে রাখা হয়েছে। কিন্তু ঐ হাসপাতালের রেজিস্ট্রার খাতা খুঁজেও ২৩ এপ্রিল তারিখ থেকে এ পর্যন্ত আক্তার হোসেন নামে কোন রোগী খুজে পাওয়া যায়নি।

নিখোঁজ আক্তারের ভাই দেলোয়ার হোসেন বলেন, আক্তার হোসেন এর দায়িত্বে থাকা পুলিশকে ফোন দিলে তিনি বলেন আমি একটু খোঁজ নেই। খোজ নিয়ে তিনি জানান যে, আমার ভাই কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আছে। আমি ঐখানও গিয়েছি ৯ মে কিন্তু তাকে পাইনি।

আক্তারের হোসেনের ভাবী শেফালি বেগম বলেন, দুইদিন গিয়েছি মিরপুর লালকুঠি হাসপাতালে, ঐখানে পায় নাই। এরপর আবার বলছে কুর্মিটোলা যান। গিয়ে দেখে কুর্মিটোলাতেও নেই। তারপরে বলে যে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে যান । ঐ খানেও দুইদিন খোজা হয়েছে। কিন্তু পাওয়া যায়নি।

আক্তার হোসেনের বাড়ি কাউন্দিয়া হলেও তিনি বান্দরবানে দিনমজুরের কাজ করত। বছরে দু একবার বান্দরবান থেকে সাভারের বাসায় আসতেন আক্তার। স্ত্রীর সাথে প্রায় ১ যুগ আগে বৈবাহিক বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এক মেয়ে ছিল তারও বিয়ে হয়ে গেছে বেশ কিছুদিন আগেই। এরপর থেকেই আক্তার হোসেন সংসারের প্রতি উদাসীন হয়ে পড়েন বলে জানান আক্তারের বড় ভাই দেলোয়ার হোসেন।

আক্তারের পরিবার জানায় এ ব্যাপারে থানায় জিডি করতে চাইলেও থানায় জিডি নেয়নি। সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর চিকিৎসক নাজমুল হুদা মিঠু বলেন, আমাকে এ বিষয়ে বলে লাভ নাই। যে এসআই(পুলিশ) দায়িত্বে আছে তার সাথে যোগাযোগ করেন। আমরা তো আর গিয়ে ভর্তি করি নাই।

আক্তার হোসেনকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সের চালক ইব্রাহীম জানান, আমি কাউন্দিয়া থেকে নিয়ে গিয়েছিলাম। নামিয়ে দিয়েছি কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে। আমার নামিয়ে দিয়ে আসার দায়িত্ব আমি নামিয়ে দিয়েছি। ভেতর পর্যন্ত পৌছিয়ে দিয়েছি। ঐখানের এক সিস্টারের কাছে আক্তার হোসেন তথ্য দিচ্ছিল। এরপর আমি চলে এসেছি।

আজ (২৩ মে) এবারে ঢাকা অর্থনীতি টীমের সাথে কথা হয়, সাভার মডেল থানার অন্তর্গত কাউন্দিয়া ফাঁড়ির দায়িত্বে থাকা পুলিশ সহ-পরিদর্শক প্রাণকৃষ্ণ অধিকারীর সাথে। তিনি বলেন, আমি যখন জানতে পেরেছি আমার এলাকায় এক করোনা রোগী আছে আমি আমার ওসি স্যার ও এসপি স্যারকে জানিয়েছি, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জানিয়েছি। তারা এ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়েছে আমি যথাযথ প্রটোকলের মাধ্যমে ঐ এ্যাম্বুলেন্সে উঠিয়ে দিয়েছি। এরপরে দায় দায়িত্ব তো তাদের। কোথায় নিল, কোন হাস্পাতালে ভর্তি করলো !!

এর পরে যখন রোগীর লোকজন এসে আমার সাথে যোগাযোগ করলো আমি তাদের বললাম যে খোঁজ নেন। এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারের নাম্বার আমি সংগ্রহ করে তার সাথে কথা বলে জানতে পারি যে তাকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নিয়ে গেছে। এই বিষয় নিয়ে বিগত ১০ দিনে অন্তত পক্ষে ৩০০ বার ফোন করেছি বিভিন্ন জায়গায়। ঐ হাসপাতালের কন্ট্রোল রুম এবং সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগ করা হয়েছে। ঐ রোগীটার অনেক খারাপ অবস্থা ছিল, মূমুর্ষ ছিল। ঐ হাসপাতালে তো ক্যামেরা আছে সেখানেও তো ধরা পড়বে, বলেন প্রাণকৃষ্ণ অধিকারী।

শেষ খবর পাওয়া অব্দি এখনো হদিস মেলেনি আক্তার হোসেনের।

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close