প্রধান শিরোনামবিশ্বজুড়ে

ট্রাম্পের অভিশংসন চায় যুক্তরাষ্ট্রের ৫৫ শতাংশ মানুষ!

ঢাকা অর্থনীতি ডেস্কঃ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বিতর্কিত ফোনালাপের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিশংসনের দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যেই দ্রুত তার অভিশংসনে উদ্যোগী হয়েছে বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। এবার রয়টার্স/ইপসোস-এর জরিপে দেখা গেছে, ট্রাম্পের অভিশংসন চায় যুক্তরাষ্ট্রের ৫৫ শতাংশ মানুষ। মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে রয়টার্স।

সোমবার প্রকাশিত ওই জরিপে বলা হয়েছে, এক সপ্তাহ আগে যে পরিমাণ মানুষ ট্রাম্পের অভিশংসন চাইতেন এখন এ সংখ্যা তার চেয়ে ১৮ শতাংশ বেশি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বিতর্কিত ফোনালাপের ফলেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ওই ফোনালাপ নিয়ে বিতর্ক উঠার পর ২৬ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চালানো জনমত জরিপে দেখা গেছে, ৫৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বলেছেন, তারা মনে করেন ট্রাম্পকে অভিশংসন করা উচিত। আগের সপ্তাহে এ হার ছিল ৩৭ শতাংশ।

সর্বশেষ বিতর্কে ৪১ শতাংশ বলেছেন, ট্রাম্পকে অভিশংসন করা উচিত হবে না। আর ১৫ শতাংশ বলেছেন, এ বিষয়ে তাদের জানা নেই। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সমর্থকদের মধ্যে ৭৪ শতাংশ বলেছেন, প্রেসিডেন্টকে ইমপিচমেন্ট হওয়া উচিত। এ হার গত সপ্তাহের চেয়ে আট শতাংশ বেশি। অন্যদিকে রিপাবলিকানদের মধ্যে ১৩ শতাংশ তার ইমপিচমেন্ট চেয়েছেন। এ হার আগের সপ্তাহের চেয়ে তিন শতাংশ বেশি। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অনলাইনে এ জরিপ চালিয়েছে জরিপকারী সংস্থা রয়টার্স/ইপসোস। এতে মতামত দিয়েছেন দুই হাজার ২৩৪ জন। এরমধ্যে ৯৪৪ জন ডেমোক্র্যাট সমর্থক এবং ৮৫৫ জন রিপাবলিকান সমর্থক।

এদিকে প্রতিনিধি পরিষদের গোয়েন্দা বিষয়ক কমিটির প্রধান অ্যাডাম স্কিফ-কে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন টাম্প। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে নিজের ফোনালাপ ফাঁসের প্রতিক্রিয়ায় সোমবার টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ দাবি জানান। টুইটারে ট্রাম্প বলেন, “প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য অ্যাডাম স্কিফ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আমার ফোনালাপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশটি নিয়ে ভুয়া ও ভয়ঙ্কর বক্তব্য দিয়েছেন। মার্কিন কংগ্রেসে এবং আমেরিকান জনগণের সামনে তিনি উচ্চকণ্ঠে এটি পাঠ করেছেন। ওই ফোনকলে আমি যা বলেছিলাম তার সঙ্গে এর কোনও সম্পর্কই নেই। রাষ্ট্রদ্রোহের জন্য গ্রেফতার?” ট্রাম্পের এ টুইটের ব্যপারে অবশ্য তাৎক্ষণিকভাবে কোনও মন্তব্য করেননি ডেমোক্র্যাট নেতা এবং প্রতিনিধি পরিষদের গোয়েন্দা বিষয়ক কমিটির প্রধান অ্যাডাম স্কিফ। তবে এর আগে এ সপ্তাহেই ট্রাম্পের ওই ফোন কল ফাঁস করা গোয়েন্দা কর্মকর্তার বক্তব্য নেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।

ফোনালাপ ফাঁসকারী সিআইএ কর্মকর্তাকেও দৃশ্যত হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। তবে এমন হুমকি আরও বিপাকে ফেলেছে তাকে। কেননা, ওই ঘটনার পর এখনও অবিলম্বে ট্রাম্পের অভিশংসন চাইছেন বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির আইনপ্রণেতারা। ফাঁস হওয়া ওই ফোনালাপে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার ছেলে হান্টারের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে রীতিমতো চাপ দিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প। ওই ফোনকলের অনুলিপিও গোপন করতে চেয়েছিল হোয়াইট হাউস। যদিও শেষ পর্যন্ত তাদের ওই প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। হোয়াইট হাউসের ফোনকলের প্রতিলিপিতে দেখা গেছে, ট্রাম্প গত ২৫ জুলাই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে জো বাইডেন ও তার ছেলের দুর্নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্তের জন্য বারবার চাপ দিচ্ছিলেন। ওই ফোনালাপের ভিত্তিতে গোয়েন্দা সংস্থার একজন সদস্য আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করার পর ট্রাম্পের অভিশংসনের দাবি সামনে আসে।

এ ঘটনায় রবিবার ট্রাম্প ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগকারী কে সেটা জানার অধিকার তার রয়েছে। টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, আমারও অন্য সব আমেরিকানের মতো আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা ব্যক্তিকে দেখার অধিকার রয়েছে। বিশেষ করে এই অভিযোগকারী একজন বিদেশি নেতার সঙ্গে আমার যথাযথ কথোপকথনকে পুরোপুরি অসত্য ও প্রতারণামূলকভাবে তুলে ধরেছেন।’ এদিকে ওই ফোনালাপ ফাঁসকারী সিআইএ কর্মকর্তার আইনজীবীদের অভিযোগ, ট্রাম্পের হুমকিতে তাদের মক্কেল বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থায় এ ধরনের সম্ভাব্য স্বাক্ষী বা প্রত্যক্ষদর্শীকে হুমকি দেওয়ার মতো ঘটনাকে তদন্তকাজের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখার সুযোগ রয়েছে। অথচ ট্রাম্প সরাসরি তার অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে পাল্টা প্রশ্ন তুলে তাকে দেখতে চেয়েছেন। মূলত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনালাপের জেরে প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্পকে অভিশংসনের বিষয়ে তদন্ত শুরুর পরই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ট্রাম্প। টুইটারে পোস্ট করা এক ভিডিওতে তিনি বলেন, এটা খুবই সহজ বিষয় যে, তারা আমাকে থামানোর চেষ্টা করছে। কেননা, আমি আপনাদের জন্য লড়াই করছি এবং তাদেরকে আমি এটা  কখনোই হতে দেবো না। বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সমালোচনা করে ট্রাম্প বলেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের কাছ থেকে সবকিছু নিয়ে যেতে চায়। তারা আপনাদের বন্দুক কেড়ে নিতে চায়। তারা আপনাদের স্বাস্থ্যসেবা, ভোটাধিকার ও স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিতে চায়। তারা আপনাদের গণরায় কেড়ে নিতে চায়।

#এমএস

Related Articles

Leave a Reply

Close
Close